![]() |
হেটার্সরা বলবে এটাই ভালবাসা আর আমি বলি কি এটাই শো-অফ |
আজ নাকি জাতীয় পতাকা দিবস। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ২ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।
যদিও দিবসের নামে উৎসব বা পুজা করা আমি পছন্দ করি না। তারপর ও আজকে জাতীয় পতাকার যথাতথা ব্যবহার দেখে কিছু লিখতে ইচ্ছে হল।
সাধারণত আমাদের দেশে জাতীয় পতাকার ব্যবহার দেখলে মনে হয় এটাকে কাপড় ও তার মজুরীর মুল্য দিয়ে মুল্যায়ন করা হয়। জাতীয় পতাকা কোন রঙীন কাপড়ের টুকরো নয়, এটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আর জাতীয় পতাকা ইদানিং শো অফ করার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। আবার কিছু ব্যবসায়ী এই পতাকা নিয়ে ও ব্যবসা করে ।
একটা জরীপে দেখা গেছে, বর্তমানে ফেসবুকে ছবি তোলার ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার কদর সবচেয়ে বেশি। তারপরে বিভিন্ন দিবস উৎযাপনে এর ক্ষেত্রে ও এর ব্যবহার যথেষ্ট।
এরপর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকার নিয়মিত ব্যবহার দেখা যায়।
এরপর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকার নিয়মিত ব্যবহার দেখা যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্কুল, কলেজ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ নিয়মে (দেশীয় আইনে) পতাকা উত্তোলন বা নিমজ্জন করলে ও আম জনতা যারা বিশেষ দিবসে বা বিশেষ উপলক্ষে বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পতাকা বহন করে, তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নির্দিষ্ট দিনের পরে বা ফেসবুকে ছবি তোলার পরে তার কাছে পতাকার আর মুল্য থাকে না। এমনকি বেশিরভাগ লোক পতাকার ব্যবহার ও জানে না, কখন উঠাতে হবে? কখন নামাতে হবে? কখন বা অর্ধ নিমজ্জিত রাখতে হবে?
পতাকা কি পায়ের নিচে গেলে কি অপরাধ, পতাকার উপর বসলে কি অপরাধ বা পতাকার উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা কতটুকু জায়েয ?
পতাকা কি পায়ের নিচে গেলে কি অপরাধ, পতাকার উপর বসলে কি অপরাধ বা পতাকার উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা কতটুকু জায়েয ?
আমাদের কিছু কিছু সাইক্লিস্ট বা ট্রাভেলার ভাইদের মাঝে ও দেখি একই অবস্থা। রাইডে বা ট্যুরে পতাকা নিয়ে যাই ঠিকই, কিন্তু পতাকার মুল্য ওই ছবি তোলা পর্যন্ত। তারপরে পতাকা কই? সে কই? পতাকা কি ব্যাগে না মাটিতে কোন খবর থাকে না।
নোট: ইদানিং পতাকা নিয়ে শো অফ করার রোগ আমাকে ও পাইছে। আমি আগে রাইডে বা ট্যুরে পতাকা বা প্লেকার্ড কিছুই নিতাম না। কিন্তু ইদানিং গত ২-৩ টা ট্যুরে পতাকা নিয়ে যাই শো-অফ করার জন্য। আজকাল শো-অফ না করলেও ট্রাবলার হওয়া যায় না। তবে আমি পতাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করি, যেমনটা একটা চকলেট বা বিস্কুট খেয়ে তার প্যাকেট টা পর্যাপ্ত জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করি।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন বাইরের উন্নত দেশগুলোতে পতাকা দিয়ে অন্তর্বাস তৈরি করা হয়?
তাহলে আমাদের দেশে পতাকা যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করলে আপনার সমস্যা কি?
জি আপনি ঠিক উন্নত দেশ যেমন আমেরিকা, ইংল্যান্ড এসব দেশে জাতীয় পতাকা দিয়ে অন্তর্বাস, মৌজা আর ও কত কি তৈরি হয়। কিন্তু তাদের দেশের আইন আর আমাদের দেশের আইন এক না।
আপনাকে আমাদের দেশের পতাকা ব্যবহার করতে হলে আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে, আপনি আমেরিকার আইন মেনে আমাদের দেশের পতাকা বহন করতে পারবেন না।
ইহার ব্যবহার বিধি জানা অতীব জরুরী ।
তাহলে আমাদের দেশে পতাকা যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করলে আপনার সমস্যা কি?
জি আপনি ঠিক উন্নত দেশ যেমন আমেরিকা, ইংল্যান্ড এসব দেশে জাতীয় পতাকা দিয়ে অন্তর্বাস, মৌজা আর ও কত কি তৈরি হয়। কিন্তু তাদের দেশের আইন আর আমাদের দেশের আইন এক না।
আপনাকে আমাদের দেশের পতাকা ব্যবহার করতে হলে আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে, আপনি আমেরিকার আইন মেনে আমাদের দেশের পতাকা বহন করতে পারবেন না।
ইহার ব্যবহার বিধি জানা অতীব জরুরী ।
জাতীয় পতাকার ম্যাপ ও ব্যবহারঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী ভবনে ব্যবহারের জন্য ৩ ধরনের মাপ রয়েছে।দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং প্রস্থ ৬ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট।
দৈর্ঘ্য ৫ ফুট এবং প্রস্থ ৩ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ১ ফুট।
দৈর্ঘ্য ২.৫ ফুট এবং প্রস্থ ১.৫ ফুট, লাল বৃত্তের বসার্ধ হবে ১/২ ফুট।
এছাড়া সরকারি পরিবহনে ব্যবহারের জন্য দুই ধরনের মাপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৯ ইঞ্চি, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ৩ ইঞ্চি।
দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ৬ ইঞ্চি, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ ২ ইঞ্চি।
আর আন্তর্জাতিক এবং দ্বি-পাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ ১০:৬ ইঞ্চি।
ব্যবহারে আইনত বিধি-নিষেধঃ
জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)-এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। তার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধান না জানলেই নয়:
১। জাতীয়ভাবে অনুমোদিত মাপ অনুযায়ী সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা তৈরি করতে হবে।
![]() |
জাতীয় পতাকা দিয়ে কাপড় পড়া অবৈধ |
২। মিছিলে পতাকা বহনের বিধান হচ্ছে, পতাকা মিছিলের কেন্দ্রে অথবা মিছিলের অগ্রগমন পথের ডান দিকে বহন করতে হবে।
৩। জাতীয় পতাকার ওপর কোনো কিছু লেখা বা মুদ্রিত করা যাবে না অথবা কোনো অনুষ্ঠান বা উপলক্ষে কোনো চিহ্ন অঙ্কন করা যাবে না;
৪। এমনকি জাতীয় পতাকাকে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না এবং গায়ে জড়িয়ে রাখা যাবে না। তবে পূর্ণ সামরিক মর্যাদা বা পূর্ণ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করা হলে তাঁর শবযাত্রায় জাতীয় পতাকা আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫। কোনো অবস্থায়ই পতাকা নিচে অবস্থিত কোনো বস্তু যেমন—মেঝে, পানি ও পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না এবং কবরের ওপরে স্থাপন করার সময় পতাকাটি কবরে নামানো যাবে না কিংবা মাটি স্পর্শ করবে না।
৫। কোনো অবস্থায়ই পতাকা নিচে অবস্থিত কোনো বস্তু যেমন—মেঝে, পানি ও পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না এবং কবরের ওপরে স্থাপন করার সময় পতাকাটি কবরে নামানো যাবে না কিংবা মাটি স্পর্শ করবে না।
![]() |
পার্কে হাওয়া খাইতে খাইতে এভাবে পতাকার উপর বসা যাবে না |
৬। জাতীয় পতাকা কোনো অবস্থায়ই সমতল বা সমান্তরালভাবে বহন করা যাবে না এবং উত্তোলনের সময় সুষ্ঠু ও দ্রুতলয়ে উত্তোলন করতে হবে এবং সসম্মানে অবনমিত করতে হবে।
৭। পতাকার অবস্থা ব্যবহারযোগ্য না হলে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাধিস্থ করতে হবে।
৮। কোনো অবস্থাতেই জাতীয় পতাকা পরিবহনের সামনে চিত করে রাখা যাবে না বা পিছনে উত্তোলন করা যাবে না।
![]() |
সামনে এভাবে পতাকা বাধা যাবে না আর পিছনে উড়ানো যাবে না |
৯। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্থাপনাগুলোতে সূর্য উদয় ও সূর্য অস্ত যাওয়ার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় পতাকা উড্ডীন রাখা যাবে।
১০। জাতীয় বিভিন্ন দিবসে সরকারী, বেসরকারী, বাংলাদেশ কূটনৈতিক ও কনসুলেটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে।
১১। শোক দিবস সমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে জাতীয় পতাকা পুরোপুরি উত্তোলন করে তারপর অর্ধনমিত অবস্থায় নামিয়ে আনতে হবে। আর দিনের শেষে জাতীয় পতাকা নামানোর সময় প্রথমে অর্ধনমিত অবস্থা থেকে পুরোটা উত্তোলন করে তারপর নামিয়ে আনতে হবে।
১২। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা যাবে না।
১২। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা যাবে না।
১৩। ব্যবসা-বাণিজ্য বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকাকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহারের আগে সরকারের নিকট থেকে লিখিত অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে।
যাদের বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়ঃ
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীজাতীয় সংসদের স্পিকার, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার
প্রধান বিচারপতি, চীফ হুইপ
বিরোধী দলীয় নেতা
পূর্ণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি
বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন
পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
পরিবহনে যারা জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারবেনঃ
রাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারপ্রধান বিচারপতি, চীফ হুইপ, বিরোধী দলীয় নেতা, পূর্ণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি
বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকগণ
জাতীয় পতাকা অবমাননার শাস্তিঃ
জাতীয় পতাকার অবমাননা কোনোভাবেই করা উচিত নয়। যদি কেউ জাতীয় পতাকার অবমাননা করে তাহলে তাকে জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০) মোতাবেক সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।জাতীয় পতাকা ব্যবহারের সরকারি সঠিক নিয়ম জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন