১৭৫০ সালে হঠাৎ করে প্যারিসের রাস্তা থেকে পথ শিশুরা উধাও হয়ে যেতে থাকে। কেউ বলতে পারছিল না কী কারণে এ রকম হচ্ছে! এরকম এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যখন সবাই বিশেষ করে শিশুদের অভিভাবকেরা ভীষণ উদ্বিগ্ন; চারিদিকে রটে যায় যে, সম্রাট লুই (পঞ্চদশ) কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় শিশুদের রক্তে স্নান করা। আর সে কারণে রাজার লোকেরা শিশুদের অপহরণ করছে। গুজবটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনসাধারণ প্রতিবাদে নেমে আসে রাজপথে, যার ফলে প্যারিসে সংঘটিত হয় ব্যাপক দাঙ্গা।
সত্যটা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ রাজপথ থেকে অবাঞ্চিতদের অপসারণের নির্দেশ দেয়। কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পুলিশ বাহিনীকে গ্রেপ্তার প্রতি অর্থ দেয়া হতো! যত বেশি গ্রেপ্তার তত টাকা! অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যরা গণহারে (শিশুসহ) গ্রেপ্তার শুরু করে এবং তাদের কারাগারে পাঠাতে থাকে। পরবর্তীতে দেখা যায়, এ সব অপহৃত শিশুদের সকলেই ফিরে এসেছিলো।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুজব গ্রেনেড এর ছেয়ে ক্ষতিকারক।
গ্রেনেড একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বিস্ফোরিত হয়, শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে পারে না। আর গুজব
ভীষণ অপ্রতিরোধ্য! এর গতিবেগ আলোর গতির চাইতে দ্রুত।
মার্ক টোয়েন বলেন
‘সত্য তার জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে গুজব বা মিথ্যা সমস্ত পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসতে সক্ষম।’
তাই যে কোন খবর প্রচার করার আগে সেটা নিয়ে ভাল করে যাচাই বাছাই করা উচিত। সেটার সোর্স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
ওমর রা. তায়ালা আনহু বলেছিলেন, কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই নির্বিচারে বলে বেড়ায়।
অতি উৎসাহী হয়ে যারা গণপিটুনি দিচ্ছে তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা উচিত। সম্প্রতি যেই ঘটনাগুলো ঘটেছে সব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করা খুব সহজ।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে গুজব ছড়ানো হয়। তবে সবছেয়ে বেশি গুজব চলে রাজনীতিতে।
বর্তামানে ছেলে ধরা গুজবের এমন অবস্থা কে কাকে মারতেছে, কেন মার খাচ্ছে কেউ কিছুই জানে না। সবছেয়ে বড় কথা হল, গণপিটুনি চলা অবস্থায় কাউকে থামানো যায় না, কেউ ভিকটিমের পক্ষে কথা বলতে চাইলে সে নিজে গণপিটা খাওয়ার সম্ভাবনা। কারণ সবাই এত উত্তেজিত থাকে সব একই গ্রুপ বলে পিটা যে দিবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই।
পরিশেষে বর্তমান ঘটনাগুলোর সাথে নিচের হাদিসের অনেক মিল পাচ্ছি
"এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না কেন সে হত্যা করছে, আর নিহত ব্যাক্তিও জানবে না কেন সে নিহত হল।" - সহীহ্ মুসলিম ৬৯৪৯ ৷
কিছু সাজেশন মেনে চলুনঃ
১। কিছুদিন অপরিচিত এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২। অপরিচিত এলাকায় গেলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে এদিক-সেদিক উদভ্রান্তের মতো তাকানো থেকে বিরত থাকুন।
৩। কাউকে খুঁজতে গেলে তার সাথে পূর্বেই যোগাযোগ করে নিন, সারপ্রাইজ দিতে কিংবা কোন কারণেই না জানিয়ে যাবেন না।
৪। নিজের বাচ্চাকে তার মাকে ছাড়া কোথাও নিয়ে যাবেন না। বিশেষ করে যেসব বাচ্চারা ছিচ কাদুনে এবং খালি বায়না ধরে তাদের নিয়ে কয়েকটা দিনের জন্য একা একা দূরত্বে বের হবেন না।
৫। অনেকের বাচ্চা দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে আবার কেউ কেউ অপরিচিত দেখতে কিউট ছোট বাচ্চাদের আদর করে কিছু কিনে দেয়। দয়া করে এসব ইচ্ছে নিজের ভিতরে রাখুন।
৬। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে থতমত খাবেন না, কনফিডেন্ট/সহজভাবে উত্তর দিন। ভাব নিতে যাবেন না।
৭। পথে-ঘাটে কারো সাথে উটকো ঝামেলায় জড়াবেন না।
৮। এ ধরণের ঘটনা দেখলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে পুলিশকে জানান।
৯। গণপিটুনি দেখলে তৎক্ষনাৎ ৯৯৯ এ ফোন দিন।
১০। যদি আপনি কোনও এলাকায় নতুন হোন (আপনাকে যদি কেউ না চিনে থাকে), তাহলে কর্মক্ষেত্র থেকে সরাসরি বাসায় চলে আসুন।
১১। যদি চাকুরীজীবী হন, তবে প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড সাথে রাখুন, প্রয়োজনে অপরিচিত এলাকায় গেলে গলায় ঝুলিয়ে রাখুন।
১২। সর্বোপরি, এ অবস্থার দ্রুতই অবসান হবে আশা করি। তাই আতঙ্কিত হবেন না।
১৩। সচেতনতা তৈরিতে সহয়তা করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন