সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬

ফিদেল ক্যাস্ট্রো ও বাঙালী জাতি (ক্যাস্ট্রো মহান এক বিপ্লবী নেতা যিনি মুসলিম হলে জঙ্গি হতেন )

বর্তমান সমাজে নাস্তিকরা সশস্ত্র জিহাদ করলে সেটা হয় বিপ্লব আর তা যদি মুসলিম করে সেটা হয় জঙ্গি । সুতরাং ফিদেল ক্যাস্ট্রো সবার কাছে বিপ্লবী নেতা হলে ও মুসলিম হলে জঙ্গি পরিচয় হত ।
সারা বাংলা এখন ক্যাস্ট্রো জ্বরে কাঁপছে। আপাতত তিনিই সব। শয়নে স্বপনে ঘরে বাইরে কেবল তিনিই। সবার উপরে তিনিই সত্য, তাহার উপরে নাই।
সুর্যসেন কিংবা ক্ষুদিরামের চেয়ে ক্যাস্ট্রো আর চে গুয়েভারা বেশী জনপ্রিয় ফেসবুক বিপ্লবীদের কাছে।
এটাই এখন বাঙালী জাতের হৃদয় নিংড়ানো আন্তরিক অনুভূতি।
সে পরলোক গমন করেছে,সেটা দুঃখের বটে।
তবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ছিল একনায়ক্তন্ত্রবাদ। মুক্তির দিশারী না তবে সমকালীন অন্যান্য নেতাদের মধ্যে প্রতিবাদের স্পৃহার যে অভাব ছিল সেটা তাঁর মাঝে ছিল।
এটাকে বিপ্লবের প্রতীক বলা যায়।
তবে বাঙালী রা লেগে গেছে তার জন্য #রেস্ট_ইন_পিস (মাগফিরাত) আর দোয়ার হ্যাঁ/না নিয়ে।
খুব ক্ষুদ্র সেন্সে বলেন তো?
এই তর্ক কি অর্থবহ!
সম্মান প্রদর্শন করতে করতে নিজেরা নিজেরাই ঢিল ছুঁড়াছুঁড়ি !!

ক্যাস্ট্রো নামক বস্তু, বস্তুতে রুপান্তরিত হয়ে গেল। যেহেতু তার মতে পরকাল বলে কিছু নাই অতএব এই "রেস্ট ইন পিসের" ভন্ডামী না করেই বরং এই ডিক্টেটরের প্রতি কমরেডীয় লাল সালাম দেয়া হয়। অথবা "হ্যাপী ট্রান্সফর্মেশন টু ব্যাকটেরিয়া" এই টাইপের উইশ করা যায়।
এখন জাহেলিয়াত তথা বেকুবদের জামানা। তাই গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী ওয়াশিংটন, লিংকন কিংবা সাম্যবাদী ডাকাত চে, কাস্ত্রো, লেনিন, মাও এরাই হিরো। এদের নাম নেওয়া হয় নাভীর গোড়া থেকে আবেগ প্রবাহিত করে। অথচ এদের তুলনায় ইয়াজিদ কিংবা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রীতিমত মহামানব।

তাই ক্যাস্ট্রো বাবু মরে শান্তি পাচ্ছেন কিনা জানি না তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চয়ই শান্তি পাচ্ছেন যে তার জন্ম বাংলা মুলুকে হয় নাই। কারণ এই মুলুকে মরেও শান্তি নেই। এখানে মরা মানুষকে নিয়ে যে পরিমান টানাটানি করা হয় অন্য কোথাও তা করা হয় না। ক্যাস্ট্রো বিয়োগে তার জাতি যত না শোকাহত তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি আহত এই বাঙালি জাত।

ফিদেলের কাছে কেউ গনতন্ত্র চায় নাই। একচুয়ালি, ফিদেল কাস্ট্রোর প্রতি কারো বিদ্বেষ আছে বলেও মনে হয় না। তবে দিনরাত সাতান্ন ধারা, বাকস্বাধীনতা আর জনগণের নাগরিক অধিকার নিয়ে ফেসবুক গরম করা পাবলিকরা যখন ক্যাস্ট্রোর পক্ষে বলতে গিয়ে বাকস্বাধীনতা আর গনতন্ত্রকে ফালতু জিনিস অভিহিত করে, তাদেরকে ক্যাস্টর অয়েল খাওয়ানো উচিৎ।

কোন সর্বহারা কোনদিন একনায়ক হতে পেরেছে জগতে তার কোন নজির নাই। 'সর্বহারার একনায়কতন্ত্রের' মসলাদার শ্লোগান ৬০ আর ৭০ দশকে লোকে খুব খেত। কিন্তু দেখা গেল সর্বহারার ভেক ধরে যারা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা পেল তারা হিটলারের চেয়েও বড় স্বৈরশাসক হয়ে বসেছে। আর অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে চন্ডীদাসেরা তাকে মহাবিপ্লবী বানিয়ে অহর্নীশি পূঁজা করে যাচ্ছে ।।

পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীদের কাছে ক্যাস্ট্রো :
ক্যাস্ট্রো বাবুর মৃত্যুতে একটা ব্যবসায়িক দিক রয়েছে। তার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে আজিজ সুপার মার্কেট এবং ঢাবি ক্যাম্পাসে চলবে তার ছবি সংবলিত টি শার্টের রমরমা ব্যবসা। তার ছবি বিক্রি হবে হরদম। বাড়তি ইনকামের জন্য মুক্তমনা সাহিত্যিক ও গবেষকেরা তাকে নিয়ে লিখবে নানা ফিচার। সভা সেমিনার করে নিজেকে জাহির করার সুযোগও কেউ হাত ছাড়া করবেন না। পরিচালকরা ও পিছিয়ে থাকবেন না, তাকে নিয়ে সিনেমাও তৈরি হবে। কারণ এখনই সময়, লোকে এখন ভালো ভাবেই গিলবে। আদর্শকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন সেখানে ব্যবসা ব্যাপারটা থাকবেই।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যাস্ট্রো :
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বড় ২ দল ক্যাস্ট্রো বন্ধনায় ফেসবুক গরম করেছে। আওয়ামিলীগ সমর্থিত ফেসবুকিস্টরা ইতিমধ্য ক্যাস্ট্রো এর সাথে শেখ মুজিব এর সাথে শেয়ার করা ভিডিও ও ছবি দিয়ে ফেসবুক হিট করে ফেলছে। সাথে ক্যাস্ট্রো এর ডায়লগতো আছে, "আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্বে এবং সাহসিকতায়, এই মানুষটিই হিমালয়! তাই উনাকে দেখেই আমার হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।" বিএনপি ও পিছিয়ে নেই তারা ও জিয়াউর রহমান এর সাথে থাকা ক্যাস্ট্রো এর ছবি শেয়ার করছে।

ধর্ম ব্যবসায়ীরা ও পিছিয়ে নেই:
ইসলামপন্থীরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই তারাও ক্যাস্ট্রো বাবুর বিপ্লব থেকে প্রেরণা নিচ্ছেন। তার বিপ্লবের পদ্ধতির একটা ইসলামী ভার্সন দেয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন। ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে ফেসবুকে তার প্রশংসায় গদগদ হয়ে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন। তার জীবনী নিয়ে পাঠচক্র করার চিন্তা করছেন। তিনি ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার বিরোধীতা করেছিলেন তাই তিনি ইসলামপন্থীদের খালাত ভাই মামাত ভাই জাতীয় কিছু একটা হবেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রপন্থীদের চোখে ক্যাষ্ট্রো :
ক্যাস্ট্রো এর মৃত্যুতে ট্রাম্প বলেছেন, সৈরচারী শাসকের বিদায়। ক্যাস্ট্রো বাবুকে সুনামে যারা ব্যাস্ত তারা আবার হয়ে যাচ্ছেন সম্রাট ট্রাম্পের দেশের দালাল। বাঙালীর কাছে দালাল শব্দটা খুব পছন্দের। তাই যাকে তাকে দালাল বলে। যে যাকে দালাল বলছে সেও হয়ত কারো না কারো দালাল। এই বাংলা মুলুক দালালে ভরা। তবে বাংলার দালাল একজনও খুজে পাওয়া যাবে না। সবাই কেবল ভিনদেশী দালাল। যেমনকি অনেকের চোখে বর্তমানে রোহিঙ্গা দের দালাল। আর আমরা যারা ম্যাংগো পিউপল তারা সবার দিকেই তাকায়ে থাকি। আর জ্বর যতদিন থাকে ততদিন বলতে থাকি জয় বাবা ক্যাস্ট্রো নাথ। আপনি অমর হোন.....

ক্যাস্ট্রোর ভাল-মন্দ কিছু গুণঃ
কিউবার জন্য ফিদেল ক্যাস্ট্রো অনেক ভুমিকা রেখেছেন, যে দেশে আছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষিত'র হার ৯৯.৮%,গড় আয়ু ৭৯.১, যে দেশে ক্যাস্ট্রোর নামে কোনও রাস্তা নেই, কোনও মূর্তি নেই। ক্যাস্ট্রোর ছোট্ট একটি দ্বীপ কিউবা বিশ্বের সবচেয়ে পাওয়ারফুল দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং টিকে থেকেছে। কতবার ক্যাস্ট্রোকে খুন করতে চেয়েছে আমেরিকা, পারেনি। কথিত আছে, বিপ্লবের পর CIA উনাকে ৬৩৮ বার ব্যর্থ হত্যাচেষ্টা করেছিল। পুঁজিবাদের স্বর্গরাজ্য আমেরিকার নাকের ডগায় বসে প্রায় অর্ধশত বছর উনি যেভাবে সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে শাসন করেছেন তা এক বিস্ময়। আমেরিকার অনেক কিছু শেখার আছে কিউবা থেকে। সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ব্যবস্থা কবে করবে আমেরিকা? কিউবা যা পেয়েছে আমেরিকা কি পারবে কখনো?

ক্যাস্ট্রোর প্রথমদিকে দেশপ্রেম থাকলে ও শেষের দিকে তিনি জনগণের উপর সৈরচারী আগ্রাসন চালান যার কারণে কিউবার অনেকে তার মৃত্যুতে নেচে গেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে। সত্যি হল কিউবায় এখনও স্বৈরতন্ত্র চলছে। সে দেশের মানুষের জীবন যাত্রা আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থা। ক্যাস্ট্রো একজন পরকীয়া প্রেমিক ও বটে। নাতালিয়ার সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল এবং এর সুত্র ধরে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।

ফিদেল ক্যাস্ত্রোর দেশে নিষিদ্ধ ৯ জিনিস

১) বাসা বাড়ীতে এবং ব্যাক্তিগত মোবাইল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার
২) কেবল টিভি
৩) সরকারের স্পেশাল পার্মিশন ব্যতিত রাজধানী হাভানায় বসবাস
৪) যে কোন ধরণের গণজমায়েত
৫) রাজনৈতিক দল গঠন, একদেশ একদল ‘কিউবা কমিউনিস্ট পার্টি’
৬) মাঝারি এবং বড় ধরনের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা
৭) ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন, ওয়াকিটকি ইমফোর্ট
৮) সরকারের অনুমতি ব্যতিত কোন বিদেশীকে দাওয়াত করা
৯) কোন বিদেশীকে ব্যক্তিগত গাড়ীতে উঠানো

যেসব মুসলিম ভাইরা ক্যাস্ট্রো এর #রেস্ট_ইন_পিস চাইতেছেন তাদের কাছে অনুরোধ ইহুদীদের জয় হতে কোন উপাদান লাগে না আপনারাই যথেষ্ট।

আল্লাহ বলেন, “مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ”
“নবী এবং মুমিনদের কারো জন্য এটা শোভা পায় না যে তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদিও তার নিকটাত্মীয় হোক না কেন। এ বিধান তখন, যখন তাদের জাহান্নামবাসী হওয়া নির্ধারিত হয়ে যাবে (অর্থাৎ, মৃত্যুর পর)।” (৯:১১৩)

প্রখ্যাত হাদীসবেত্তা, মুসলিম শরীফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যখ্যাতা, ইমাম নববী রহ. তার ‘আযকার’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
“অমুসলিমের জন্য হিদায়াত, সুস্থতা ও রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা যাবে। (সুস্থতা ও রোগমুক্তির জন্য এ আশায় দোয়া করবে যে, আল্লাহ তাকে রোগমুক্ত করে হিদায়াতের তাওফীক দিবেন।) তবে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। (কেননা, যাকে সে বিশ্বাস করে না, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা তার জন্য নিরর্থক।) ”
মৃত মানুষদের,গুণী মানুষদের সম্মান করুন অর্থবহ উপায়ে।

ফিদেল ক্যাস্ট্রো একজন প্রেমিক ও ছিলেন বটে তবে সেটা ছিল পরকীয়া

একজন কিংবদন্তি বিপ্লবীর প্রাপ্য সম্মানেই ফিদেলকে সবাই স্মরণ করছেন আজ। সেটা স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু ফিদেলের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে এক অসামান্য প্রেম-উপাখ্যানের জুটির দ্বিতীয়জন বিদায় নিলেন।
এটা বললে কি অবিশ্বাস্য শোনাবে যে- নাতালিয়ার মৃত্যুর পরই মনে হয়েছিল এবার ফিদেল পৃথিবী থেকে ছুটি নেবেন!
নাতালিয়া রেভুয়েল্টা মারা গেছেন গত বছর।
ছোট করে তাঁর মৃত্যু সংবাদটি ছাপা হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। এর বাইরে এই নারীকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমই।
৮৯ বছর বয়সে মারা যান নাতালিয়া। আধুনিক কিউবার অন্যতম সেরা সুন্দরি হিসেবে বিবেচিত হতেন তিনি জীবদ্দশায়। তাঁর মৃত্যুতে সামান্য যেটুকু বিশ্ব সংবাদ হয়েছে তার মূলে রয়েছে ফিদেল কাস্ট্রোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। মহাকাব্যিক সেই বন্ধুত্বের বিস্তারিত কমই জানে বিশ্ববাসী।
১৯৫২ সালে ফিদেলের সঙ্গে নাতালিয়ার বন্ধুত্ব। তখনও ফিদেল উদীয়মান এক ক্ষুদে রাজনৈতিক কর্মী মাত্র। তবে সমসাময়িকদের মধ্যে নাতালিয়াই বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন ফিদেলের স্বপ্ন ও সামর্থ্যরে পরিধি। নিজের ব্যাংক একাউন্ট, ডায়মন্ডের গহণাই কেবল নয়-- বাড়ির অনেকখানিও ছেড়ে দিয়েছিলেন ফিদেলকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য।
এলিট সমাজের একজন হয়েও বিপ্লবী এডভেনচারের প্রতি নাতালিয়ার ছিল দুর্দমনীয় আকর্ষণ। ফলে সময়ের পথ বেয়ে ফিদেল হাভানার পথে যত এগিয়েছেন নাতালিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের গভীরতাও তত বেড়েছে। এক সময় নাতালিয়া ও ফিদেলের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে পৃথিবীতে আসে ‘আলিনা’। আলিনা'র বাকি কাহিনী বরং আরেকদিন বলা যাবে।
আজ বরং আমরা ফিদেল আর নাতালিয়ার গল্পই শুনি।
১৯২৫-এর ৬ ডিসেম্বর নাতালিয়ার জন্ম। ফিদেলের কাছে যিনি ছিলেন ‘ন্যাটি’। পড়েছেন আমেরিকান মালিকানাধীন হাভানার সবচেয়ে দামী স্কুল রাসটন একাডেমিতে এবং পরে পেনসালভেনিয়াতে। পেশা জীবনও প্রথম শুরু করেন হাভানার মার্কিন এমবেসিতে। ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন তাঁর থেকে অন্তত ২০ বছর বেশি বয়সী ধনাঢ্য হার্ট সার্জন অরলান্ডো ফার্নান্দেজকে। সেই সম্পর্কের ফসল নাতালিয়ার প্রথম কন্যা নিনা। এই সম্পর্কের সূত্রে নাতালিয়া কিউবার এলিট সমাজে ঘুরেছেন দীর্ঘ অনেক বছর। অরলান্ডো ছিলেন অতি ব্যস্ত মানুষ, আর এক ককটেইল পার্টি থেকে অপর ককটেইল পার্টিতে ঘুরে ঘুরে নীল নয়না ন্যাটি ছিলেন ক্লান্ত।
এসময়ই ন্যাটি কিছুটা রাজনীতিমুখী হন। সরকার বিরোধী অর্থডক্স পার্টির মিটিংগুলোতে যেতেন তিনি।
ফিদেল তখন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র। বিয়ে করেছেন মির্তা ডায়াজ-বালার্টকে। এরকম সময়ই তরুণদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নাতালিয়া ও ফিদেলের দৃষ্টি বিনিময়। দুজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তৃতীয় আরেক বন্ধু। তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্য এসময় বাতিস্তার রোষানলে পড়ে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে যেতে হয় ফিদেলকে। যে কারণে প্রথম পরিচয়ের পর অনেকগুলো মাস দুজনের আর দেখাই হয়নি। কিন্তু আবার যখন দুজনের দেখা হলো তখন ইতিহাস যেন অপেক্ষা করছিল নতুন কিছুর জন্যই। দ্রুতই ন্যাটির বাড়ির গোপন কক্ষগুলো ফিদেল ও তার সহযোদ্ধাতের শলা-পরামর্শের আস্তানা হয়ে ওঠে। ঠিক ঐসময়ই দুনিয়া কাঁপানো একদল বিপ্লবী তৈরি হচ্ছিলো পূর্ব কিউবার মনাকাডা ব্যারাক আক্রমণের জন্য। আর তাদের অঙ্গীকারের উত্তাপ পাল্টে দিয়েছিল ন্যাটির মনোজগত।
নাতালিয়া শুধু আবেগ সম্বল করেই ফিদেলের পাশে দাঁড়ান নি। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন তিনি। জানতেন এই ফিদেল-রাউল-চে দের কী দরকার। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই প্রয়োজনের কাছে। সমগ্র সঞ্চয় আর অলংকার ভান্ডার নির্ধিধায় তুলে দিয়েছিলেন বিপ্লবীদের অস্ত্র সংগ্রহে। আর হাভানার সংবাদ মাধ্যমগুলোর টেবিলে ফিদেলদের অগ্নিঝরা বার্তাগুলো পৌঁছে যেত ন্যাটির হাত হয়েই।
কিন্তু ১৯৫৩ বিশ্ববাসী জানে মনাকাডা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছিল আর ফিদেলদের অধিকাংশ যোদ্ধাই নিহত হয়েছিলেন ঐ যাত্রা। জীবিতরাও আটক হন সবাই। বস্তুত এসময়ই ন্যাটির সঙ্গে ফিদেলের ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতা গভীরতা পায়। বইয়ের ভেতরে ছবি পাঠানো ছাড়াও কারাগারে নিয়মিত ফিদেলকে লিখতেন ন্যাটি। সেসব চিঠির কোন কোনটিতে থাকতো সমুদ্র তীরের একমুঠো বালু-- ন্যাটির সঙ্গে ফিদেল যে তীরে হেটেছিলেন হয়তো কিছুটা সময়। এখনো পর্যন্ত ক্যাস্ট্রোর জীবনীকাররা তাঁর ব্যক্তিগত প্রেমময়তার সর্বোচ্চ নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেন কারাগার থেকে ন্যাটিকে লেখা সেসময়কার চিঠিগুলোকে। সেরকম এক চিঠিতে ১৯৫৪ সালে ক্যাস্ট্রো লিখেছিলেন : ‘আমি অগ্নিকান্ডের মুখোমুখি, প্লিজ লিখ আমাকে-- তোমার চিঠি আমাকে কেবল শক্তি দিচ্ছে।’
আরেক চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘তুমি টাইপ করে লিখবে না, হাতে লিখে পাঠাও--আমি সেটা ভালোবাসি।’
উপরে উল্লিখিত চিঠিগুলোর একটিই একদিন কারা প্রধান সচেতনভাবে পাঠিয়ে দেন ফিদেলের স্ত্রী মির্তার কাছে। দ্রুতই বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ফিদেল ও মির্তার। পরের বছর ছাড়া পান তিনি এবং ন্যাটির ভাষায়, ‘সেবারই আমরা প্রথমবারের মতো প্রেমিক হয়ে উঠেছিলাম।’
এসময় ন্যাটি আলিনাকে গর্ভে নেন। কিন্তু দীর্ঘসময় ফিদেলকে জানতে দেননি তা। ফিদেল তখন মেক্সিকোতে। চূড়ান্ত জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় প্রস্তুতি চলছে তাঁদের। তাঁর বিয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন নাতালিয়া। তিনি মনে করতেন, ফিদেল আর ফিরে আসতে পারবে না--অবশ্যই হত্যা করা হবে তাঁকে।
১৯৫৬ তে আলিনার জন্ম হয়। তার নামটি রেখেছিলেন অরনাল্ডোই।
আলিনার জন্মের ঠিক ছয় মাস আগেই ক্যাস্ট্রোরা গোপনে দেশে ফিরেছিলেন এবং পাহাড়ের গোপন আস্তানায় আবার সংগঠিত করছিলেন ঐতিহাসিক এক মুহূর্তকে। আলিনা তাঁর স্মৃতি কথায় লিখেছেন, ১২ বছর বয়সে প্রথম ফিদেল তাঁকে নামের শেষে ক্যাস্ট্রো পদবী ব্যবহার করতে বলেছিলেন। কিন্তু আলিনা তাতে আগ্রহ দেখাননি।
ততদিনে তাদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সামরিক ক্ষমতা সম্পন্ন বাতিস্তাকে উৎখাত করেছেন ফিদেলরা।
ন্যাটির নীরব আগ্রহ ছিল ফাস্টলেডি হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার। কিন্তু ‘বিপ্লবের কাজে’ ফিদেল তখন আবার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ন্যাটি থেকে পরিকল্পিত এক দূরত্বে। বিপ্লবের আগের অধ্যায়ের মতোই পরের অধ্যায়েও নাতালিয়াকে তখন সর্বোচ্চ এক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
একই সময় ন্যাটির সঙ্গে ফিদেলের সম্পর্কের গভীরতা টের পান অরলান্ডো। ১৯৫৯ সালে বিচ্ছেদ ঘটে দুজনের। নিনা থেকে যায় বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে।
বিয়ে করেননি আর ন্যাটি। ক্যাস্ট্রোর সমাজতন্ত্র তাদের পৈত্রিক বাড়ি জাতিয়করণ করে ফেলেছিল। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি নতুন কিউবার পুনর্নির্মাণে। সিভিল মিলিশিয়াতে যোগ দেন। আর তাঁর কাছে থাকা ফিদেলের চিঠিগুলোকে রেখে দেন ‘কেবল দু’জনের মৃত্যুর পর প্রকাশিতব্য’ হিসেবে।
মৃত্যুর আগে ফিদেলের সঙ্গে নিজের জীবনকে ন্যাটি অভিহিত করেছিলেন 'loving friendship’ হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এক, আগ্রহ ছিল এক এবং রুচিবোধও ছিল একরকম। ।’

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস ( সংখ্যালঘু হিসাবে নির্যাতনের রেকর্ড ও জাতি হিসাবে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত)

পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ও জুলুমের স্বীকার হচ্ছে তা হল "মুসলিম জাতি"। কই-কখনও তো শুনিনি লক্ষ-লক্ষ হিন্দুকে মারা হচ্ছে, কিংবা ক্রিশ্চান/জিউষ্টদের উপর অত্যাচার জুলুম হচ্ছে এমন তো শুনি না। অথচ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলো সব অমুসলিমদের দখলেই তাই তাদের কিছু হওয়ার আগে মিডিয়াতে চলে আসে । কিন্তু মুসলিমদেরটা প্রচার হয় না। আর হ্যা, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়। তবে তা মুসলিমদের তুলনায় গৌণ। আর তাদের মিডিয়াগুলো দু'একটা গৌণ ব্যাপার নিয়েই তুলপাড় করে। অথচ মুসলিমদের উপর যে পাহাড় সম নির্যাতনও হয় তা কারও চোখে পড়ে না। আর সমস্ত মিডিয়া ও সুশীলরা এমন কৌশল এঁটেছে যখনি কোনও মুসলিম এসব প্রচার করিবে তখনি জঙ্গি/ সন্ত্রাসী ট্যাগ দিবে। একটা খুব কমন বিষয়ঃ পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের যুদ্ধ নিয়ে চিন্তা করুন। হিটলারের বিশ্বযুদ্ধ, ম্যারিকা বনাম ভিয়েতনামী যুদ্ধ, প্যালেস্টাইন বনাম ইসরাঈল, চীনের স্নায়ূযুদ্ধ। সবই কিন্তু এক একটি জাতি অন্যের উপর প্রাধান্য দিতেই এতসব আয়োজন। কিন্তু একটু ভাবুন, এই অমীমাংসিত দেশ-জাতি ও তাদের বিজ্ঞদাতারা কিন্তু সকলে ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে একজোট। নিশ্চয় এসব যুদ্ধা ও অমিমাংসিত জাতিগুলো ইসলামের মর্মকথা বুঝতে সমর্থ হয়েছে। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়, ইসলাম/মুসলিম এমন কিছু একটা যা তাদের ভিঁত নাড়িয়ে দেবে; ইসলাম পৃথিবীতে থাকলে তাদের রাজত্ব চূরমার করে দিবে। তাই সর্বোমূলে ইসলামের বিরোধীতায় সকলে বেশ জোড়েসুড়েই মেতে উঠেছে। এতেও কী প্রমাণ হয় না "ইসলাম" সত্য?
রোহিঙ্গাদের ইতিহাস : রোহিঙ্গারা পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন স্টেটের উত্তরাংশে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠী। ধর্মের বিশ্বাসে এরা অধিকাংশই মুসলমান। রাখাইন স্টেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হল রোহিঙ্গা। মায়ানমারের সরকারী হিসেব মতে, প্রায় আট লক্ষ রোহিঙ্গা আরাকানে বসবাস করে। রোহিঙ্গারা বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলোর একটি। মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। মায়ানমার সরকার ১৩৫ টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, রোহিঙ্গারা এই তালিকার অর্ন্তভুক্ত নয়। মায়ানমার সরকারের মতে, রোহিঙ্গারা হল বাংলাদেশী, যারা বর্তমানে অবৈধভাবে মায়ানমারে বসবাস করছে। যদিও ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে।
ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গারা আরাকান রাজ্যের আদি বাসিন্দা। রোহিঙ্গারা মায়ামারে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাস করে আসছে। সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরবে যখন থেকে ইসলামের আবির্ভাব হয়, তখন থেকে চট্টগ্রামের ন্যায় এখানেও ইসলামের বিস্তৃতি ঘটে আরব বণিক ও মুহাদ্দিছ ওলামায়ে দ্বীনের মাধ্যমে (থিসিস পৃঃ ৪০৩)। অনেকে সূফীদের কথা বলেন। কিন্তু এটা ভুল। কেননা ইসলামের প্রাথমিক ও স্বর্ণযুগে কথিত সূফীবাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দের বহু পরে তিববত হয়ে মিয়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবেশ ঘটে। প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানীদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব। পরবর্তীতে চাঁটগাইয়া, রাখাইন, আরাকানী, বার্মিজ, বাঙালী, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মিশ্রণে উদ্ভুত এই সংকর জাতিতে রুপ নেয় মায়ানমার। এয়োদশ-চর্তুদশ শতাব্দীতে রোহিঙ্গারা পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পঞ্চদশ শতাব্দী হতে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিজেদের রাজ্য ছিল। ইতিহাস এর পিছনের পাতায় গেলে জানা যায় আরকান রাজ্য প্রাচীন রাহমী রাজ্যভুক্ত এলাকা বলে ধারণা করা হয়। রাহমী আরবী নাম যাকে এখন ‘রামু’ বলা হয়। তৎকালীন রাহমী রাজা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য এক কলস আদা উপঢৌকন হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। যা তিনি ছাহাবীগণকে বণ্টন করে দেন (থিসিস, পৃঃ ৪২৫)।এতে ধরে নেওয়া যায় যে, তখন থেকেই এখানে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে এবং স্থানীয় রাজাসহ সাধারণ অধিবাসীরা ইসলামকে সাদরে বরণ করেছে। জাহায ডুবির কারণেও বহু আরব এখানে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিয়ে-শাদী করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। ইসলাম আগমনের বহু পরে ভারত থেকে ব্রাহ্মণদের অত্যাচারে বিতাড়িত হয়ে বৌদ্ধরা তাদের আদি বাসভূমি ভারত ছেড়ে থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, তিববত, মিয়ানমার, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে অভিবাসী হয়। ভারত এখন প্রায় বৌদ্ধশূন্য বলা চলে। মধ্যযুগে আরাকানের রাজধানীর নাম ছিল ম্রোহাং। সেটারই অপভ্রংশ হ’ল রোহাং বা রোসাঙ্গ এবং সেখানকার অধিবাসীরা হ’ল রোহিঙ্গা। ১৪৩০ থেকে ১৭৮৫ খৃঃ পর্যন্ত সাড়ে তিনশ’ বছরের অধিক সময় আরাকানের রাজধানী ছিল রোসাঙ্গ। এখানকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী মুসলমান। আর মুসলিমদের শতকরা ৯২ জন হ’ল রোহিঙ্গা। ১৪৩৪ থেকে ১৬৪৫ খৃঃ পর্যন্ত দু’শো বছরের অধিক কাল যাবৎ কলিমা শাহ, সুলতান শাহ, সিকান্দার শাহ, সলীম শাহ, হুসায়েন শাহ প্রমুখ ১৭ জন রাজা স্বাধীন আরাকান রাজ্য শাসন করেন। তাদের মুদ্রার এক পিঠে কালেমা ত্বাইয়িবা ও অন্য পিঠে রাজার নাম ও সাল ফারসীতে লেখা থাকত। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তখন বাংলা ভাষার চরমোন্নতি সাধিত হয়। কবি আলাওল, দৌলত কাযী, মরদান শাহ প্রমুখ কবিগণ আরাকান রাজসভা অলংকৃত করেন। আজকে যেমন বাংলা ভাষার রাজধানী হ’ল ঢাকা, সেযুগে তেমনি বাংলা ভাষার রাজধানী ছিল রোসাঙ্গ। এক সময় আকিয়াবের চাউল বন্যা উপদ্রুত বাংলাদেশের খাদ্যাভাব মিটাতো। মগদস্যুদের দমনে শায়েস্তা খাঁকে তারাই সাহায্য করেছিল। যার ফলে মাত্র ৩৬ ঘণ্টায় তাঁর পক্ষে চট্টগ্রাম জয় করা ও মগমুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। তাই রোহিঙ্গাদের নিকট বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের ঋণ অনেক বেশী। আজ তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমাদের নিকট আশ্রয়প্রার্থী। প্রশ্ন জাগে, কোলকাতার বাঙ্গালীদের প্রতি সরকার ও আমরা যতটা গলাগলি করি, আরাকানের বাঙ্গালীদের প্রতি তার বিপরীত কেন? তারা নির্যাতিত মুসলমান, তাদের গায়ের রঙ কালো, তারা সুশীল এর কাতারে পড়ে না, সেজন্যেই কি? ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খান কর্তৃক চট্টগ্রাম দখল করে নেওয়ার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম আরাকান রাজ্যভুক্ত ছিল। তাছাড়া প্রাকৃতিক দিক দিয়ে দুর্গম ইয়োমা পর্বতমালা আরাকানকে বার্মা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সেকারণ নাফ নদীর তীরবর্তী টেকনাফ, বান্দরবন, কক্সবাজার ও সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকানের সবচাইতে নিকটতম ও সুগম্য এলাকা। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ ভারত ছেড়ে যাওয়ার আগে ভেদবুদ্ধি সম্পন্ন বৃটিশ ও ভারতীয় হিন্দু নেতারা কাশ্মীর, জুনাগড়, হায়দরাবাদ প্রভৃতি ভারতবর্ষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য সমূহের ন্যায় আরাকান রাজ্যকেও ১৯৩৭ সালে বার্মার সাথে জুড়ে দেয়। অথচ ধর্ম, ভাষা ও ভৌগলিক কারণে এটা বাংলাদেশেরই অংশ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে এখানে কাষ্মীরের ন্যায় স্থায়ীভাবে রক্ত ঝরানোর ব্যবস্থা করা হয়। দেখা গেল যে, ১৯৪২ সালের এক অন্ধকার রাতে ইয়োমা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বর্মী শাসকদের উস্কানীতে নিরীহ আরাকানী মুসলমানদের উপর অতর্কিতে হামলা চালালো হিংস্র মগ দস্যুরা এবং মাসাধিককাল ব্যাপী হত্যাযজ্ঞে প্রায় এক লাখ মুসলমানকে তারা হত্যা করল। বিতাড়িত হ’ল কয়েক লাখ মুসলমান। এরপর ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী বৃটিশের কাছ থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হ’তে নির্যাতনের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলে। তাদের জন্য বার্মার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। ফলে তারা নিজ গৃহে পরবাসী হয়ে যায়। এইভাবে শত শত বছর ধরে মুসলিম ও বৌদ্ধ একত্রে বসবাসকারী নাগরিকদের স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকারে পরিণত করা হয়। বার্মিজ বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা আরাকানী বৌদ্ধ রাখাইনদের সাথে মিলে আরাকানকে মুসলিমশূন্য করার মিশনে নেমে পড়ে। আদি ফিলিস্তীনীদের হটিয়ে যেমন সেখানে বাইরের ইহুদীদের এনে বসানো হচ্ছে, একইভাবে আদি রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে সেখানে রাখাইনদের এনে বসানো হচ্ছে। অথচ পৃথিবী নির্বিকার। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জীবন যাপনঃ মায়ানমার সরকারের দাবি, রোহিঙ্গারা হল ভারতীয়, বাঙালী ও চাঁটগাইয়া সেটলার, যাদেরকে ব্রিটিশরা আরাকানে এনেছে। মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করায় সকল প্রকার নাগরিক ও মৌলিক সুবিধা হতে বঞ্চিত রোহিঙ্গারা। মায়ানমারে ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য পরিচয় পত্র থাকাটা খু্ব জরুরি বিষয়। কিন্তু মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের পরিচয় পত্র ইস্যু করে না, ফলে, এমনিতেই পিছিয়ে পড়া রোহিঙ্গারা আরো পিছিয়ে পড়ছে। মায়ানমার সরকারের ভূমি ও সম্পত্তি আইন অনুসারে বিদেশীরা কোন সম্পত্তি ও ভূমি মালিক হতে পারে না। রোহিঙ্গারা মায়ানমার সরকারের দৃষ্টিতে অবৈধ অভিবাসী তথা, বিদেশী। তাই, তারা কোন ভূমি বা, স্থায়ী সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। বর্তমানে যেসকল ভূমিতে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে, মায়ানমার সরকার যেকোন মুহুর্তে সেগুলো দখল করে নিতে পারে। এখানে শেষ নয়, মায়ানমার সরকার আইনের মাধ্যমে রীতিমত অসহনীয় করে তুলেছে রোহিঙ্গাদের জীবন। রোহিঙ্গারা সরকারী চাকুরী করতে পারে না, সরকারী কোন দপ্তরে রোহিঙ্গা কোন সেবা পায় না, ব্যাংকে লেনদেন করতে পারে না, সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রের সেবা গ্রহণ করতে পারে না, উপযোগ সেবার (বিদ্যুত, পানি, জ্বালানী) জন্য আবেদন করতে পারে না, স্বপরিচয়ে শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভর্তি হতে পারে না। প্রায় ৮০% রোহিঙ্গা বাস্তবিক অর্থে অশিক্ষিত। প্রায়ই মায়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গা নিপীড়ণের খবর পাওয়া যায়। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে খাটানো হয়। প্রায়শ স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন লোকালয়ে হানা দেয়। শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধন, সরকারী জমি অধিগ্রহণের নামে রোহিঙ্গাদের অনেকগুলো মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। এর মধ্যে প্রাচীন কিছু মসজিদও আছে। অনেক রোহিঙ্গাদের ব্যবসায় দখল/বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য 'গ্যাটো' জাতীয় বিশেষ ধরণের ব্যবস্থা করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ বসবাসের স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা থেকে ওরা অনুমতি ছাড়া বের হতে পারে না। সেই গ্যাটোগুলোর ভিতরে আবদ্ধ মানবেতর জীবনযাপন করে রোহিঙ্গারা। চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপযোগ সেবার ব্যবস্থা এই গ্যাটোগুলোতে থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও নিম্নমানের। রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেয়া লাগে। এছাড়া দুটোর বেশি সন্তান নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করায় ও দুজনের বেশি সন্তানের জন্ম দেয়ায় রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তানদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার। এইসব পরিবারের সন্তানরা সরকারের 'গ্যাটো ব্যবস্থা' তালিকাভুক্ত নয়, ফলে, এদের জীবন ফোঁড়ার উপরে বিষ এ ঘা এর মত। এরা গ্যাটোগুলোতে থাকতে পারে না। আবার, গ্যাটোর বাইরেও থাকতে পারে না, কারণ, মায়ানমারের নাগরিক নয় ওরা। অবস্থাটা ওদের এমন যে, মায়ানমার সরকার ওদের কোন অস্তিত্বই স্বীকার করে না। এইসব পরিচয়হীন রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের পথে পা বাড়ায়। নৌপথে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঢুবে মারা গেছে। মায়ানমার সরকারের নিপীড়ণের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। রোহিঙ্গা বিরুদ্ধে রাখাইনসহ অন্যান্য বৌদ্ধ আরাকানীদের উস্কানি দিচ্ছে মায়ানমার সরকার। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে বৌদ্ধ মৌলবাদকে সরাসরি ইন্ধন ও মদদ যোগাচ্ছে মায়ানমার সরকার। মায়ানমার সরকারের মনে রাখা দরকার, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর মাঝে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সুসংগঠিত অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। রোহিঙ্গাদের ক্রমাগত নিপীড়ণ করে ওদেরকে চরমপন্থার দিকেই ক্রমশ ঠেলে পাঠাচ্ছে মায়ানমার সরকার।
রোহিঙ্গা বাংলাদেশঃ বিগত কয়েক দশক ধরে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করছে। রুটিনমাফিক নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে। বর্তমানে সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় বসবাস করছে। যদিও রিফিউজি হিসেবে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো কম। যুলুম ও অত্যাচারের এমন কোন দিক নেই, যা এই নরপশুরা চালিয়ে যাচ্ছে না নিরীহ মযলূম মুসলমানদের উপরে। যার ফলে বিগত দিনেও তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ-এর টেকনাফ অঞ্চলে আশ্রয়ের জন্য ছুটে এসেছে। এবারও স্বাভাবিকভাবে তারা এদেশমুখী হয়েছে। সর্বস্বহারা মানুষগুলো যখন বাঁচার আশায় নৌকায় ভেসে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশী দ্বীপগুলোর দিকে ছুটছে, তখন বর্বর বর্মী সেনাবাহিনী তাদেরকে পিছন থেকে গুলি করছে, নৌকাসহ ডুবিয়ে মারছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছে পুনরায় বধ্যভূমি আরাকানের দিকে। ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত মানুষগুলি এভাবেই সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে অথবা ডুবে মরছে। সভ্য সমাজে এদৃশ্য কল্পনাতীত। ২০১২ সালের আগে বাংলাদেশ কখনো তাদের তাড়িয়ে দেয়নি। বরং আশ্রয় দিয়েছে নিঃসন্দেহে মানবিক কারণে। কিন্তু এবার এ নিয়মের ব্যতিক্রম হল। তাই বলতে হয়, অসহায় ডুবন্ত মানুষকে বাঁচানোই প্রথম কাজ, না তাকে নিয়ে রাজনীতি করাই প্রথম কাজ? পৃথিবীর সকল দেশ প্রতিবেশী দেশের নির্যাতিত আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। আমাদের জনগণও বিগত দিনে ভারতে এবং বর্তমান সময়ে ইরাক, লিবিয়া ও অন্যান্য হাঙ্গামাপূর্ণ দেশ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ আজ আমরা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিয়ে যে অমানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম, তাতে আমাদের ভবিষ্যত কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন । নোটঃ ১।১৯৪২,১৯৭৮,১৯৯২,২০১২-এর মত ২০১৬-তে এসে তারা আবারও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হ’ল। ২।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বার্মা দখল করলে বার্মিজ জাতীয়তাবাদী ও জাপানীরা মিলে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, জাতিগত ধোলাই শুরু করে। এসময় প্রায় পঞ্চাশ হাজার রোহিঙ্গা ভারত উপমহাদেশের বিভিন্নি অঞ্চলে পালিয়ে আসে। ৩।জেনারেল নে উইনের সময় আশির দশকে আদমশুমারির সময় রোহিঙ্গাদের বিদেশী ঘোষণা করে নিপীড়ণ করা।এসময় প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। উদ্বাস্তুরা গণহত্যা, ধর্ষণ, সন্তান চুরিসহ নানান ধরণের জাতিগত ধোলাইয়ের অভিযোগ আনে। ১৯৬০ সালে গভর্ণর যাকির হোসাইনের দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকায় ভীত হয়ে অত্যাচারী জেনারেল নে উইন তার ঠেলে দেওয়া বিশ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্ত্তকে ফিরিয়ে নিতে ও তাদের বাড়ীঘরে সম্মানজনক পুনর্বাসনে বাধ্য হয়েছিল। ৪।১৯৯১-৯২ সালে The State Law and Order Restoration Council (SLORC) এর মাধ্যমে মায়ানমার সরকার উত্তর রাখাইন স্টেটে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দমনের নামে রোহিঙ্গাদের জাতিগত ধোলাই শুরু করে। এসময় মায়ানমারের সৈন্য ও স্থানীয় রাখাইনরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, শিশু চুরি, গ্যাটোতে স্থানান্তর, মসজিদ ভেঙে দেয়া, ধর্মপালনে বাধা দেয়া, বাংলাদেশে পুশইনসহ সামরিক ক্যাম্পে বাধ্যতামূলক শ্রমে বাধ্য করে। এসময় বাংলাদেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে।
জাতিসংঘ ও মায়ানমার ঃ অনলাইনে সুচির নোবেল প্রাইজ নিয়ে বেশ আলোচিত হচ্ছে । জাতিসংঘের ভুমিকা নিয়ে ও প্রশ্ন আসতেছে । জাতিসংঘ নামক যে নপুংসক সংস্থাটি আছে, এক সময় তার মহাসচিব ছিল উথান্ট। সেই উথান্ট হলো মায়ানমার এর। সেই সংস্থাটি কি করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি যে, জাতিসংঘ সহ বৃহৎ রাষ্ট্রবর্গ বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য। অথচ অত্যাচারীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে না। আবার শান্তি রক্ষী বাহিনী পাঠাচ্ছে না আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মত। এতে ধরে নেওয়া যায় যে, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দাবাড়ুদের ইঙ্গিতেই মিয়ানমার সরকার এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। কারন? একটাই!! মার খাচ্ছে মুসলমানরা। ঐ অমুসলিম/বুদ্ধিষ্ট/নাস্তিক/হিন্দুরা সব সময় মুসলমানদের শত্রু ভাবে। তাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যদি কোন ঘটনা পায় তবে কুকুর যেমন হাড্ডি নিয়ে রাস্তায় কামড়া-কামড়ি করে ঠিক একইভাবে তারাও ঝাপিয়ে পড়ে। অপরদিকে প্রকৃত মুসলমানরা কখনই তাদের শত্রুভাবে না। ভাবে ওরা তো আমার ভাই। তাই তার দোষ খুজেঁ লাভ কি ? বিষয়টা খুব স্বাভাবিক, কেউ আপনার উপর আঘাত করলো, আপনি যদি তার আঘাতের পাল্টা উত্তর না দেন তবে আঘাত খেতে খেতে এক সময় আপনি দুর্বল হলে তার কাছে হেরে যাবেন, যেটা এখন মুসলমানদের ক্ষেত্রে হচ্ছে। কিন্তু মুসলমানরা যদি একবার পাল্টা আঘাত করতে পারতো, তবে দুষ্টুচক্র লেজ গুটিয়ে পালাতো। কিন্তু মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গীতেই ভুল, এ কারণেই সমস্যা। তারা মসজিদ ছেড়ে এখন মন্দিরে আর ফেসবুকে প্রার্থনা করে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কি হ’ল যে, তোমরা আল্লাহ্র পথে লড়াই করছ না? অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা প্রার্থনা করে বলছে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই অত্যাচারী জনপদ হ’তে মুক্ত কর এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হ’তে অভিভাবক প্রদান কর এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হ’তে সাহায্যকারী প্রেরণ কর’ (নিসা ৪/৭৫)। প্রত্যেক মুসলিম অন্তরে জিহাদের তামান্না রাখে,রাখা উচিত ,না হয় মুনাফেকী মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। নামাযের জন্যে যেমন শর্ত আছে ঠিক তেমনি জিহাদের জন্যেও শর্ত আছে। মসজিদের ঈমাম যে কেউই হতে পারে। জিহাদের ঈমাম যে কেউ হতে পারে না,জিহাদের ঈমাম অবশ্যই রাষ্ট্রে শাসক হতে হবে । আপনি জিহাদের ঈমামত আর নামাযের ঈমামত কে একাকার করে পেলেছেন। জিহাদের জন্যে জিহাদের ঈমামকে রাষ্ট্রীয় শাসক হতে হবে কেন জানেন ? মুজাহিদেরা অনেক মূল্যবান। মহান আল্লাহ মুজাহিদ ভাইদের মাধ্যমে ইসলাম কে রক্ষা করেছেন। এই মুজাহিদ ভাইদেরকে নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে,সেই জন্যেই জিহাদের ঈমামতের জন্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকা শর্ত করা হয়েছে।তথাকথিত জিহাদী সংগঠন গুলোর কারণে কাফেরেরা এক ডিলে বহু পাখি শিকার করছে। দেখুন সৌদির নেতৃত্বে জিহাদ হচ্ছে,সেখানে কয়জন মুজাহিদ নিহত হয়েছে? হলেও খুবই সামান্য । আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাহীন তথাকথিত জিহাদে কয়জন তথাকথিত মুজাহিদ বেচে আছে ? যে কয়েকজন বেছে আছ,তাও মুসলমানদের রাষ্ট্র দখল আর কাফেরদেরকে তেল সাপ্লাই করার কারণে। কাফেরদের ভূখণ্ড মায়ানমার, ইসরাঈল, রাশিয়া বা ভারত দখল বা হামলা করলে দেখা যাবে ,কতক্ষণ টিকে থাকে। য়াই এস, দাইয়েস,তালেবান,বুকোহারাম,আল কায়েদা,জামাত ইখয়ানি ইত্যাদি সংগঠনের অস্তিত্ব টিকে আছে শুধু মুসলিম শাসকদের বিরোধিতা ও মুসলিম দেশগুলো অস্থিতিশীল করার কারণে। কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে,দেখি কয় দিন অস্তিত্ব টিকে থাকে। তাই বলি তোমাদের কার্যক্রম জিহাদ নয়,ফাসাদ। কারণ এই ফাসাদের কারণে লাখ লাখ সাধারণ মুসলিম মারা যাচ্ছে। তথাকথিত জিহাদের নামে (১) ইসলাম প্রিয় তরুণ যুবকদেরকে শেষ করে দিচ্ছে। (২)মুসলিম রাষ্ট্র গুলিকে অস্থিতিশীল করছে। (৩)কাফেরদের মুসলিম রাষ্ট্র থেকে ফায়দা লুটার পথ করে দিচ্ছে। হে আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে প্রকৃত জিহাদ নছিব কর। আল্লাহর এই একান্ত আহবান অবিশ্বাসী-কাফের সুচি-মোদি-হুজিনতাওদের প্রতি নয়, বরং এ আহবান ইসলামে বিশ্বাসী মুসলিম রাষ্ট্রের শাসক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাদের প্রতি। যার হাতে বর্তমানে আল্লাহ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পণ করেছেন। এক্ষণে যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করি, তাহ’লে আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়ে যাব। যে গযবের হাত থেকে ফেরাঊন-নমরূদরা বাঁচতে পারেনি। তাই শুধু আমরাই নই, বিশ্বের যে প্রান্তে যে মুসলমান বসবাস করছে, বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্রনেতাগণ ও মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবেরগণ এবং অর্থ-সম্পদের অধিকারী দেশের ব্যবসায়ী ও ধনিকশ্রেণী ও মানবতাবাদী সকল মানুষকে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। সেই সাথে আমাদের সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের একান্ত আহবান, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করুন! সুশীলদের প্রতি অনুরোধ রোহিঙ্গাদের প্রতি অন্যায় মানুষের প্রতি অন্যায়। মুসলিমদের উপর নির্যাতন হচ্ছে না, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন হচ্ছে। জাতিগত দাঙ্গা আর ধর্মীয় সহিংসতা এক নয়। বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভরশীল নিজের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। মেহেরবানী করে এটাকে আপনাদের ইসলামী আন্দোলনের সাথে মিলিয়ে নিবেন না। তাইলে এই অসহায় জনগোষ্ঠীটি সারা দুনিয়ার মানুষের সহমর্মিতা হারাবে।
ফেসবুকে কিছু প্রশন ও উত্তরঃ ১। আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা কি নিরাপদ ? উত্তরঃ সংখ্যালঘুরা সব জায়গায় নির্যাতিত এটা চরম সত্য । তবে পার্শবর্তী দেশ মায়ানমার ও ভারত এর তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ ।তারপর ও আমার দেশের কিছু সুশীল বার্মার দাঙার সাথে আমাদের দেশের তুলনা করে দেখে অবাক হয় !!!! কিসের সাথে কি পান্তা ভাতে ঘি? গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা সমস্যা বৃদ্ধির পর থেকে বাংলাদেশের নাস্তিক ও হিন্দুরা ‘রোহিঙ্গাদের তুলনা করছে বাংলাদেশের হিন্দুদের সাথে’। দাবি করছে- দু’টো দলই নাকি নির্যাতিত। ১৯৪২,১৯৭৮,১৯৯২,২০১২ তে-বার্মাতে হাজার হাজার লাশ পড়েছিল এই ২০১৬ তে ও আছে। আর বর্তমানে ও কি করুণ পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখতেছেন। তাছাড়া ভারতে ১৯৪৮ এ হায়দ্রাবাদে ১০ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা, ১৯৯২ সালে সারা ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যা, ২০০২ সালে গুজরাটে গণহত্যা , স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে মুসলিম নিধনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে লাখের কাছে। অপরদিকে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে হিন্দু বিরোধী দাঙ্গার সংখ্যা কত ? কতজন হিন্দুকে দাঙ্গা করে হত্যা করা হয়েছে ? আপনি কি বার্মার মত গণলাশ দেখাতে পারবেন ? কাশ্মীরের মত গণলাশ দেখাতে পারবে্ন ? গুজরাটের মত গণলাশ দেখাতে পারবেন ? যদি না পারেন তবে দয়া করে শুধু কয়েকটা ভাঙ্গামূর্তি, ভাঙ্গা হান্ডি-পাতিল আর গালে হাত দেওয়া হিন্দু নারীর ছবি দেখিয়ে আলগা ইমোশন তৈরী করো না। কারণ সেটা এখন রাজনৈতিক কারণ বা নিজেদের দাঙাতে ও হয় । সবচেয়ে বড় কথা হল মসলিমদের বিনাঅপরাধে একটা কাফেরকে মারাও অনেক বড় অপরাধ। তাছাড়া আমাদের দেশে সব সংখ্যালঘুরা একজোট সাথে নাস্তিক, এন্টি ইসলামিক, সুশীল, সুবিধাবাদী মুসলিমরা নিজেদের জনপ্রিয়তার জন্য একজোট। এই দেশে প্রতিনিয়ত মুসলিমদের মারা হলে ও সেটা মিডিয়া ও সুশীলদের আলোকপাত করে না, কিন্তু কোন কারণে একজন সংখ্যালঘু যদি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কারণে ও নির্যাতিত হয় আর সেটা যদি কেউ ফেসবুকে ৪২০ নাম্বার বিপদ সংকেতে লাইক, শেয়ার ও কমেন্টের ঝড় উঠবে, অথচ বিভিন্ন কাফের দেশ ও নিজ দেশে যে অন্যায়ভাবে মুসলিমদের মারা হয় সেটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নাই।
২। মায়ানমার এর এমন দশা কেন? সেখানে সৌদি কি করছে? উত্তরঃ বার্মা,ফিলিস্তিন সিরিয়াসহ নির্যাতিত মুসলমান দের জন্যে কোন মুসলিম রাষ্ট্র কিছু করে থাকলে,একমাত্র সৌদি আরবই করছে। বার্মার নির্যাতিত মুসলিমদেরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বাঙালীদের ফেরত দিলে ও রোহিঙাদের ফেরত পাঠায় না। রোহিঙা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘে কথা বলছে। এর ছেয়ে তাদের বেশি কিছু কি করার আছে কারণ তারা মায়ানমার থেকে অনেক দূরে ।আর তাছাড়া শুধু যে তারা মুসলিম তা কিন্তু না আমরা পার্শবর্তী ৩য় মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে আমরা কি করছি? তাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি প্রতিনিয়ত । রাষ্ট্রীয়ভাবে মায়ানমার সরকারকে কোন চাপ দিচ্ছি না ।

বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬

ট্রাম্প আর হিলারী যেন মুসলিমদের ভাগ্য বিধাতা

এমেরিকাবাসী ভোটের পর শান্তিতে ঘুম দিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার যে যার কাজে যোগ দিবে, আর আমাদের বাঙালী খাওয়া দাওয়া ছেড়ে এখন ও ট্রাম্প নিয়া পইড়া আছে।
জাতির এই চুলকানি দেখে আর চুপ থাকতে পারলাম না।
নারী নেতৃত্ব হারাম সেটা আমরা না বুঝলে ও এমেরিকানরা ঠিকই বুঝল। আর আমাদের দেশের মসজিদ ছেড়ে মন্দিরে গিয়ে দুয়া করা মুসলিমরা তাই হিলারীর জন্য দোয়া করে গলা শুকায় ফেলতেছে।
দেখে মনে হল হিলারী যেন মুসলিমদের রক্ষাকর্তা (নাউজুবিল্লাহহ)
আর মুসলমানের ভাগ্য ট্রাম্প নির্ধারণ করে না। ব্ল্যাকদের ভাগ্য বিধাতাও সে না। বরং ট্রাম্পের ভাগ্যকেই নিয়ন্ত্রণ করেন আমাদের আল্লাহ। তিনি সেটা তার গলার সাথে ঝুলাইয়া দিয়াছেন। ট্রাম্পের বিজয়, হিলারির পরাজয় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আল্লাহ। অথচ ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা তা ভুলে যাই। কি হবে, কি হবে ধ্বনিতে চারদিক কাঁপিয়ে তুলি।
মুসলিমদের বিশ্বাস এতই ঠুঙ্কু দেখে অবাক হয়। এত সহজে কি আমরা ফেরাউন আর নমরুদ এর কথা ভুলে যায়।
আর যারা হিলারী কান্নায় জর্জরিত তারা নিচের হাদীসগুলো ভাল করে পড়ুন।
১. যখন তোমাদের ধনী শ্রেণী কৃপণ হবে, যখন তোমাদের যাবতীয় কাজে কর্তৃত্ব তোমাদের নারীদের হাতে চলে যাবে, তখন তোমাদের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে অভ্যন্তর ভাগ অধিক কল্যাণকর হবে।” (তিরমিযী)
২. “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলো যে, (ইরানী) পারস্যের জনগণ কিসরার কন্যাকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছে, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কখনো সাফল্য অর্জন করতে পারে না, যে জাতি স্বীয় কাজকর্মের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বভার একজন নারীর হাতে সোপর্দ করে।” (বুখারী ও তিরমিযী)
বোকারা নেতৃত্ব দেবে।
আমানতদারকে বিশ্বাসঘাতক ও বিশ্বাসঘাতককে আমানতদার মনে করা হবে।
বিদ্যা উঠে যাবে, মূর্খতার ব্যাপক হারে প্রসার ঘটবে।
লম্পট ও বদমাইশ টাইপের লোকেরা হবে সমাজের নেতা।
ঝুলুম নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে।
এগুলো হচ্ছে কেয়ামতের কিছু বৈশিষ্ট্য।
শেষ সময়ে ঈমান রক্ষা করা হবে হাতে জ্বলন্ত আগুনের কয়লা রাখার চাইতেও বেশি কঠিন।
★ হাদিসের উপর আমল করার প্রয়োজনীয়তা
মুসলিমরা মনে না করলেও! কাফেররা কিন্তু হাদিসের শিহ্মা থেকে শিহ্মা গ্রহন করে থাকে। যদিও প্রকাশ্যে তার সীকৃতি দেয় না।


 মুসলমানদের নিরাপত্তা কিংবা অগ্রগতি, কোন কিছুই হিলারী কিংবা ট্রাম্পের জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করে না। মুসলিমদের নিরাপত্তা ও অগ্রগতি নির্ভর করে আল্লাহর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং নিজেদের কর্মের ওপর।
আসুন, আল্লাহর দিকে রুজু হই, নিজের আমল ও কর্মপন্থা শুদ্ধ করি। তবেই আল্লাহ্‌কে আপনার সাথে পাবেন।

আমার মতে মুনাফিক এর ছেয়ে প্রকাশ্য শত্রু (কাফের) অনেক ভাল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট এলেন যিনি অন্তত হিপোক্রেইট নন। এই প্রথম আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্টের ভাষণ শুনে 'এহ, তুমি কত ভালো, সেইটা জানা আছে' ভাবনা আসবে না। ট্রাম্প অন্তত অন্তরে খুনি আর মুখে জেন্টলম্যান না। সে অন্তরে যা রাখে, মুখে সেটাই বলে। উপর দিয়া ভালো মানুষী নাই তার। এধরণের মানুষ পছন্দ করি।
আমেরিকা বহু মানুষের জীবন নষ্ট করেছে। বহু দেশকে ধ্বংস করেছে। আমেরিকা পৃথিবীর সব দেশের প্রাইভেসী নষ্ট করেছে। সেই প্রাইভেসী নষ্টের নাম আবার সুন্দর করে স্যাটেলাইট দিয়েছে। তখন গা চিড়বিড় করতো। এই এরাই যখন আবার শান্তির বানী শুনাই তখন রাগে ক্ষোভে যা তা করতে ইচ্ছে করতো। এখন অন্তত এই রাগটা থাকবে না। নিউক্লিয়ার উইপন হাতে নিয়ে শান্তির বানী, সভ্যতার ঝান্ডা উড়ানো অসহ্য।