একজন কিংবদন্তি বিপ্লবীর প্রাপ্য সম্মানেই ফিদেলকে সবাই স্মরণ করছেন আজ।
সেটা স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু ফিদেলের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে এক অসামান্য
প্রেম-উপাখ্যানের জুটির দ্বিতীয়জন বিদায় নিলেন।
এটা বললে কি অবিশ্বাস্য শোনাবে যে- নাতালিয়ার মৃত্যুর পরই মনে হয়েছিল এবার ফিদেল পৃথিবী থেকে ছুটি নেবেন!
নাতালিয়া রেভুয়েল্টা মারা গেছেন গত বছর।
ছোট করে তাঁর মৃত্যু সংবাদটি ছাপা হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। এর বাইরে এই নারীকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমই।
৮৯ বছর বয়সে মারা যান নাতালিয়া। আধুনিক কিউবার অন্যতম সেরা সুন্দরি হিসেবে বিবেচিত হতেন তিনি জীবদ্দশায়। তাঁর মৃত্যুতে সামান্য যেটুকু বিশ্ব সংবাদ হয়েছে তার মূলে রয়েছে ফিদেল কাস্ট্রোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। মহাকাব্যিক সেই বন্ধুত্বের বিস্তারিত কমই জানে বিশ্ববাসী।
১৯৫২ সালে ফিদেলের সঙ্গে নাতালিয়ার বন্ধুত্ব। তখনও ফিদেল উদীয়মান এক ক্ষুদে রাজনৈতিক কর্মী মাত্র। তবে সমসাময়িকদের মধ্যে নাতালিয়াই বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন ফিদেলের স্বপ্ন ও সামর্থ্যরে পরিধি। নিজের ব্যাংক একাউন্ট, ডায়মন্ডের গহণাই কেবল নয়-- বাড়ির অনেকখানিও ছেড়ে দিয়েছিলেন ফিদেলকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য।
এলিট সমাজের একজন হয়েও বিপ্লবী এডভেনচারের প্রতি নাতালিয়ার ছিল দুর্দমনীয় আকর্ষণ। ফলে সময়ের পথ বেয়ে ফিদেল হাভানার পথে যত এগিয়েছেন নাতালিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের গভীরতাও তত বেড়েছে। এক সময় নাতালিয়া ও ফিদেলের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে পৃথিবীতে আসে ‘আলিনা’। আলিনা'র বাকি কাহিনী বরং আরেকদিন বলা যাবে।
আজ বরং আমরা ফিদেল আর নাতালিয়ার গল্পই শুনি।
১৯২৫-এর ৬ ডিসেম্বর নাতালিয়ার জন্ম। ফিদেলের কাছে যিনি ছিলেন ‘ন্যাটি’। পড়েছেন আমেরিকান মালিকানাধীন হাভানার সবচেয়ে দামী স্কুল রাসটন একাডেমিতে এবং পরে পেনসালভেনিয়াতে। পেশা জীবনও প্রথম শুরু করেন হাভানার মার্কিন এমবেসিতে। ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন তাঁর থেকে অন্তত ২০ বছর বেশি বয়সী ধনাঢ্য হার্ট সার্জন অরলান্ডো ফার্নান্দেজকে। সেই সম্পর্কের ফসল নাতালিয়ার প্রথম কন্যা নিনা। এই সম্পর্কের সূত্রে নাতালিয়া কিউবার এলিট সমাজে ঘুরেছেন দীর্ঘ অনেক বছর। অরলান্ডো ছিলেন অতি ব্যস্ত মানুষ, আর এক ককটেইল পার্টি থেকে অপর ককটেইল পার্টিতে ঘুরে ঘুরে নীল নয়না ন্যাটি ছিলেন ক্লান্ত।
এসময়ই ন্যাটি কিছুটা রাজনীতিমুখী হন। সরকার বিরোধী অর্থডক্স পার্টির মিটিংগুলোতে যেতেন তিনি।
ফিদেল তখন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র। বিয়ে করেছেন মির্তা ডায়াজ-বালার্টকে। এরকম সময়ই তরুণদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নাতালিয়া ও ফিদেলের দৃষ্টি বিনিময়। দুজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তৃতীয় আরেক বন্ধু। তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্য এসময় বাতিস্তার রোষানলে পড়ে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে যেতে হয় ফিদেলকে। যে কারণে প্রথম পরিচয়ের পর অনেকগুলো মাস দুজনের আর দেখাই হয়নি। কিন্তু আবার যখন দুজনের দেখা হলো তখন ইতিহাস যেন অপেক্ষা করছিল নতুন কিছুর জন্যই। দ্রুতই ন্যাটির বাড়ির গোপন কক্ষগুলো ফিদেল ও তার সহযোদ্ধাতের শলা-পরামর্শের আস্তানা হয়ে ওঠে। ঠিক ঐসময়ই দুনিয়া কাঁপানো একদল বিপ্লবী তৈরি হচ্ছিলো পূর্ব কিউবার মনাকাডা ব্যারাক আক্রমণের জন্য। আর তাদের অঙ্গীকারের উত্তাপ পাল্টে দিয়েছিল ন্যাটির মনোজগত।
নাতালিয়া শুধু আবেগ সম্বল করেই ফিদেলের পাশে দাঁড়ান নি। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন তিনি। জানতেন এই ফিদেল-রাউল-চে দের কী দরকার। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই প্রয়োজনের কাছে। সমগ্র সঞ্চয় আর অলংকার ভান্ডার নির্ধিধায় তুলে দিয়েছিলেন বিপ্লবীদের অস্ত্র সংগ্রহে। আর হাভানার সংবাদ মাধ্যমগুলোর টেবিলে ফিদেলদের অগ্নিঝরা বার্তাগুলো পৌঁছে যেত ন্যাটির হাত হয়েই।
কিন্তু ১৯৫৩ বিশ্ববাসী জানে মনাকাডা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছিল আর ফিদেলদের অধিকাংশ যোদ্ধাই নিহত হয়েছিলেন ঐ যাত্রা। জীবিতরাও আটক হন সবাই। বস্তুত এসময়ই ন্যাটির সঙ্গে ফিদেলের ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতা গভীরতা পায়। বইয়ের ভেতরে ছবি পাঠানো ছাড়াও কারাগারে নিয়মিত ফিদেলকে লিখতেন ন্যাটি। সেসব চিঠির কোন কোনটিতে থাকতো সমুদ্র তীরের একমুঠো বালু-- ন্যাটির সঙ্গে ফিদেল যে তীরে হেটেছিলেন হয়তো কিছুটা সময়। এখনো পর্যন্ত ক্যাস্ট্রোর জীবনীকাররা তাঁর ব্যক্তিগত প্রেমময়তার সর্বোচ্চ নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেন কারাগার থেকে ন্যাটিকে লেখা সেসময়কার চিঠিগুলোকে। সেরকম এক চিঠিতে ১৯৫৪ সালে ক্যাস্ট্রো লিখেছিলেন : ‘আমি অগ্নিকান্ডের মুখোমুখি, প্লিজ লিখ আমাকে-- তোমার চিঠি আমাকে কেবল শক্তি দিচ্ছে।’
আরেক চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘তুমি টাইপ করে লিখবে না, হাতে লিখে পাঠাও--আমি সেটা ভালোবাসি।’
উপরে উল্লিখিত চিঠিগুলোর একটিই একদিন কারা প্রধান সচেতনভাবে পাঠিয়ে দেন ফিদেলের স্ত্রী মির্তার কাছে। দ্রুতই বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ফিদেল ও মির্তার। পরের বছর ছাড়া পান তিনি এবং ন্যাটির ভাষায়, ‘সেবারই আমরা প্রথমবারের মতো প্রেমিক হয়ে উঠেছিলাম।’
এসময় ন্যাটি আলিনাকে গর্ভে নেন। কিন্তু দীর্ঘসময় ফিদেলকে জানতে দেননি তা। ফিদেল তখন মেক্সিকোতে। চূড়ান্ত জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় প্রস্তুতি চলছে তাঁদের। তাঁর বিয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন নাতালিয়া। তিনি মনে করতেন, ফিদেল আর ফিরে আসতে পারবে না--অবশ্যই হত্যা করা হবে তাঁকে।
১৯৫৬ তে আলিনার জন্ম হয়। তার নামটি রেখেছিলেন অরনাল্ডোই।
আলিনার জন্মের ঠিক ছয় মাস আগেই ক্যাস্ট্রোরা গোপনে দেশে ফিরেছিলেন এবং পাহাড়ের গোপন আস্তানায় আবার সংগঠিত করছিলেন ঐতিহাসিক এক মুহূর্তকে। আলিনা তাঁর স্মৃতি কথায় লিখেছেন, ১২ বছর বয়সে প্রথম ফিদেল তাঁকে নামের শেষে ক্যাস্ট্রো পদবী ব্যবহার করতে বলেছিলেন। কিন্তু আলিনা তাতে আগ্রহ দেখাননি।
ততদিনে তাদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সামরিক ক্ষমতা সম্পন্ন বাতিস্তাকে উৎখাত করেছেন ফিদেলরা।
ন্যাটির নীরব আগ্রহ ছিল ফাস্টলেডি হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার। কিন্তু ‘বিপ্লবের কাজে’ ফিদেল তখন আবার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ন্যাটি থেকে পরিকল্পিত এক দূরত্বে। বিপ্লবের আগের অধ্যায়ের মতোই পরের অধ্যায়েও নাতালিয়াকে তখন সর্বোচ্চ এক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
একই সময় ন্যাটির সঙ্গে ফিদেলের সম্পর্কের গভীরতা টের পান অরলান্ডো। ১৯৫৯ সালে বিচ্ছেদ ঘটে দুজনের। নিনা থেকে যায় বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে।
বিয়ে করেননি আর ন্যাটি। ক্যাস্ট্রোর সমাজতন্ত্র তাদের পৈত্রিক বাড়ি জাতিয়করণ করে ফেলেছিল। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি নতুন কিউবার পুনর্নির্মাণে। সিভিল মিলিশিয়াতে যোগ দেন। আর তাঁর কাছে থাকা ফিদেলের চিঠিগুলোকে রেখে দেন ‘কেবল দু’জনের মৃত্যুর পর প্রকাশিতব্য’ হিসেবে।
মৃত্যুর আগে ফিদেলের সঙ্গে নিজের জীবনকে ন্যাটি অভিহিত করেছিলেন 'loving friendship’ হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এক, আগ্রহ ছিল এক এবং রুচিবোধও ছিল একরকম। ।’
এটা বললে কি অবিশ্বাস্য শোনাবে যে- নাতালিয়ার মৃত্যুর পরই মনে হয়েছিল এবার ফিদেল পৃথিবী থেকে ছুটি নেবেন!
নাতালিয়া রেভুয়েল্টা মারা গেছেন গত বছর।
ছোট করে তাঁর মৃত্যু সংবাদটি ছাপা হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। এর বাইরে এই নারীকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমই।
৮৯ বছর বয়সে মারা যান নাতালিয়া। আধুনিক কিউবার অন্যতম সেরা সুন্দরি হিসেবে বিবেচিত হতেন তিনি জীবদ্দশায়। তাঁর মৃত্যুতে সামান্য যেটুকু বিশ্ব সংবাদ হয়েছে তার মূলে রয়েছে ফিদেল কাস্ট্রোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব। মহাকাব্যিক সেই বন্ধুত্বের বিস্তারিত কমই জানে বিশ্ববাসী।
১৯৫২ সালে ফিদেলের সঙ্গে নাতালিয়ার বন্ধুত্ব। তখনও ফিদেল উদীয়মান এক ক্ষুদে রাজনৈতিক কর্মী মাত্র। তবে সমসাময়িকদের মধ্যে নাতালিয়াই বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন ফিদেলের স্বপ্ন ও সামর্থ্যরে পরিধি। নিজের ব্যাংক একাউন্ট, ডায়মন্ডের গহণাই কেবল নয়-- বাড়ির অনেকখানিও ছেড়ে দিয়েছিলেন ফিদেলকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য।
এলিট সমাজের একজন হয়েও বিপ্লবী এডভেনচারের প্রতি নাতালিয়ার ছিল দুর্দমনীয় আকর্ষণ। ফলে সময়ের পথ বেয়ে ফিদেল হাভানার পথে যত এগিয়েছেন নাতালিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের গভীরতাও তত বেড়েছে। এক সময় নাতালিয়া ও ফিদেলের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে পৃথিবীতে আসে ‘আলিনা’। আলিনা'র বাকি কাহিনী বরং আরেকদিন বলা যাবে।
আজ বরং আমরা ফিদেল আর নাতালিয়ার গল্পই শুনি।
১৯২৫-এর ৬ ডিসেম্বর নাতালিয়ার জন্ম। ফিদেলের কাছে যিনি ছিলেন ‘ন্যাটি’। পড়েছেন আমেরিকান মালিকানাধীন হাভানার সবচেয়ে দামী স্কুল রাসটন একাডেমিতে এবং পরে পেনসালভেনিয়াতে। পেশা জীবনও প্রথম শুরু করেন হাভানার মার্কিন এমবেসিতে। ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন তাঁর থেকে অন্তত ২০ বছর বেশি বয়সী ধনাঢ্য হার্ট সার্জন অরলান্ডো ফার্নান্দেজকে। সেই সম্পর্কের ফসল নাতালিয়ার প্রথম কন্যা নিনা। এই সম্পর্কের সূত্রে নাতালিয়া কিউবার এলিট সমাজে ঘুরেছেন দীর্ঘ অনেক বছর। অরলান্ডো ছিলেন অতি ব্যস্ত মানুষ, আর এক ককটেইল পার্টি থেকে অপর ককটেইল পার্টিতে ঘুরে ঘুরে নীল নয়না ন্যাটি ছিলেন ক্লান্ত।
এসময়ই ন্যাটি কিছুটা রাজনীতিমুখী হন। সরকার বিরোধী অর্থডক্স পার্টির মিটিংগুলোতে যেতেন তিনি।
ফিদেল তখন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র। বিয়ে করেছেন মির্তা ডায়াজ-বালার্টকে। এরকম সময়ই তরুণদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নাতালিয়া ও ফিদেলের দৃষ্টি বিনিময়। দুজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তৃতীয় আরেক বন্ধু। তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্য এসময় বাতিস্তার রোষানলে পড়ে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে যেতে হয় ফিদেলকে। যে কারণে প্রথম পরিচয়ের পর অনেকগুলো মাস দুজনের আর দেখাই হয়নি। কিন্তু আবার যখন দুজনের দেখা হলো তখন ইতিহাস যেন অপেক্ষা করছিল নতুন কিছুর জন্যই। দ্রুতই ন্যাটির বাড়ির গোপন কক্ষগুলো ফিদেল ও তার সহযোদ্ধাতের শলা-পরামর্শের আস্তানা হয়ে ওঠে। ঠিক ঐসময়ই দুনিয়া কাঁপানো একদল বিপ্লবী তৈরি হচ্ছিলো পূর্ব কিউবার মনাকাডা ব্যারাক আক্রমণের জন্য। আর তাদের অঙ্গীকারের উত্তাপ পাল্টে দিয়েছিল ন্যাটির মনোজগত।
নাতালিয়া শুধু আবেগ সম্বল করেই ফিদেলের পাশে দাঁড়ান নি। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন তিনি। জানতেন এই ফিদেল-রাউল-চে দের কী দরকার। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই প্রয়োজনের কাছে। সমগ্র সঞ্চয় আর অলংকার ভান্ডার নির্ধিধায় তুলে দিয়েছিলেন বিপ্লবীদের অস্ত্র সংগ্রহে। আর হাভানার সংবাদ মাধ্যমগুলোর টেবিলে ফিদেলদের অগ্নিঝরা বার্তাগুলো পৌঁছে যেত ন্যাটির হাত হয়েই।
কিন্তু ১৯৫৩ বিশ্ববাসী জানে মনাকাডা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছিল আর ফিদেলদের অধিকাংশ যোদ্ধাই নিহত হয়েছিলেন ঐ যাত্রা। জীবিতরাও আটক হন সবাই। বস্তুত এসময়ই ন্যাটির সঙ্গে ফিদেলের ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গতা গভীরতা পায়। বইয়ের ভেতরে ছবি পাঠানো ছাড়াও কারাগারে নিয়মিত ফিদেলকে লিখতেন ন্যাটি। সেসব চিঠির কোন কোনটিতে থাকতো সমুদ্র তীরের একমুঠো বালু-- ন্যাটির সঙ্গে ফিদেল যে তীরে হেটেছিলেন হয়তো কিছুটা সময়। এখনো পর্যন্ত ক্যাস্ট্রোর জীবনীকাররা তাঁর ব্যক্তিগত প্রেমময়তার সর্বোচ্চ নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেন কারাগার থেকে ন্যাটিকে লেখা সেসময়কার চিঠিগুলোকে। সেরকম এক চিঠিতে ১৯৫৪ সালে ক্যাস্ট্রো লিখেছিলেন : ‘আমি অগ্নিকান্ডের মুখোমুখি, প্লিজ লিখ আমাকে-- তোমার চিঠি আমাকে কেবল শক্তি দিচ্ছে।’
আরেক চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘তুমি টাইপ করে লিখবে না, হাতে লিখে পাঠাও--আমি সেটা ভালোবাসি।’
উপরে উল্লিখিত চিঠিগুলোর একটিই একদিন কারা প্রধান সচেতনভাবে পাঠিয়ে দেন ফিদেলের স্ত্রী মির্তার কাছে। দ্রুতই বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায় ফিদেল ও মির্তার। পরের বছর ছাড়া পান তিনি এবং ন্যাটির ভাষায়, ‘সেবারই আমরা প্রথমবারের মতো প্রেমিক হয়ে উঠেছিলাম।’
এসময় ন্যাটি আলিনাকে গর্ভে নেন। কিন্তু দীর্ঘসময় ফিদেলকে জানতে দেননি তা। ফিদেল তখন মেক্সিকোতে। চূড়ান্ত জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় প্রস্তুতি চলছে তাঁদের। তাঁর বিয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন নাতালিয়া। তিনি মনে করতেন, ফিদেল আর ফিরে আসতে পারবে না--অবশ্যই হত্যা করা হবে তাঁকে।
১৯৫৬ তে আলিনার জন্ম হয়। তার নামটি রেখেছিলেন অরনাল্ডোই।
আলিনার জন্মের ঠিক ছয় মাস আগেই ক্যাস্ট্রোরা গোপনে দেশে ফিরেছিলেন এবং পাহাড়ের গোপন আস্তানায় আবার সংগঠিত করছিলেন ঐতিহাসিক এক মুহূর্তকে। আলিনা তাঁর স্মৃতি কথায় লিখেছেন, ১২ বছর বয়সে প্রথম ফিদেল তাঁকে নামের শেষে ক্যাস্ট্রো পদবী ব্যবহার করতে বলেছিলেন। কিন্তু আলিনা তাতে আগ্রহ দেখাননি।
ততদিনে তাদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সামরিক ক্ষমতা সম্পন্ন বাতিস্তাকে উৎখাত করেছেন ফিদেলরা।
ন্যাটির নীরব আগ্রহ ছিল ফাস্টলেডি হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার। কিন্তু ‘বিপ্লবের কাজে’ ফিদেল তখন আবার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ন্যাটি থেকে পরিকল্পিত এক দূরত্বে। বিপ্লবের আগের অধ্যায়ের মতোই পরের অধ্যায়েও নাতালিয়াকে তখন সর্বোচ্চ এক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
একই সময় ন্যাটির সঙ্গে ফিদেলের সম্পর্কের গভীরতা টের পান অরলান্ডো। ১৯৫৯ সালে বিচ্ছেদ ঘটে দুজনের। নিনা থেকে যায় বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে।
বিয়ে করেননি আর ন্যাটি। ক্যাস্ট্রোর সমাজতন্ত্র তাদের পৈত্রিক বাড়ি জাতিয়করণ করে ফেলেছিল। নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি নতুন কিউবার পুনর্নির্মাণে। সিভিল মিলিশিয়াতে যোগ দেন। আর তাঁর কাছে থাকা ফিদেলের চিঠিগুলোকে রেখে দেন ‘কেবল দু’জনের মৃত্যুর পর প্রকাশিতব্য’ হিসেবে।
মৃত্যুর আগে ফিদেলের সঙ্গে নিজের জীবনকে ন্যাটি অভিহিত করেছিলেন 'loving friendship’ হিসেবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এক, আগ্রহ ছিল এক এবং রুচিবোধও ছিল একরকম। ।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন