পার্থক্যগুলো
নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-
(ক) তারা নিজেরা কুরআন বুঝে না
অন্যদেরকেও বুঝতে দেয় না। কিন্তু রাসূল (সাঃ) নিজে কুরআন শিখিয়েছেন এবং তার
প্রচারকও ছিলেন।
(খ) তাদের দাওয়াতী নিয়ম স্বপ্নে
প্রাপ্ত। রাসূলের দাওয়াতী নিয়ম স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত (মায়েদা ৬৭)।
(গ) তাদের দাওয়াতের মধ্যে সপ্তাহে ১ দিন, মাসে ৩ দিন, বছরে ১ চিল্লা, কমপক্ষে জীবনে ৩ চিল্লা লাগিয়ে দ্বীনি কাজ শিখতে হবে। পক্ষান্তরে রাসূলের
দাওয়াতী কাজ এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই।
(ঘ) তাদের দাওয়াতের মধ্যে ইসলামের একটি অপরিহার্য বিধান ও আল্লাহর প্রিয় জিহাদ নেই। কিন্তু রাসূলের দাওয়াতে জিহাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
(ঘ) তাদের দাওয়াতের মধ্যে ইসলামের একটি অপরিহার্য বিধান ও আল্লাহর প্রিয় জিহাদ নেই। কিন্তু রাসূলের দাওয়াতে জিহাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
(ঙ) তাদের দাওয়াতে কাফের মুশরিকদের কোন বাধা নেই। রাসূল (সাঃ) যখন দাওয়াত দিতেন
তখন কাফের মুশরিক বাধা দিত।
(চ) তাদের দাওয়াতী কাজ শেখার মূল উৎস হল ‘ফাযায়েলে আমাল’। কুরআনের চেয়েও তারা ফাযায়িলে আমাল-এর গুরুত্ব বেশী দেয়। অথচ
রাসূলের দাওয়াত শেখার মূল উৎস হচ্ছে কুরআন ও সহীহ হাদীস। আর কুরআনের মর্যাদা হচ্ছে
সবকিছুর উর্ধ্বে।
(ছ) তারা রাষ্ট্রপ্রধান বা ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে না যদিও তারা
শিরক করে ও ইসলামের বিরুদ্ধে বলে। রাসূল তৎকালীন রাষ্টপ্রধান ও ক্ষমতাশালীদের
বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, শিরক ও ইসলাম বিরোধী কাজে বাধা দিয়েছেন।
(জ) তারা কোন দাওয়াতী কাজ করার সময় কুরআন হাদীসের দলীল পেশ করে না, নিজেদের মনগড়া কথা বলে। রাসূল নিজে কোন কিছু বলার বা দাওয়াত
দেবার আগে দলীল পেশ করতেন।
(ঝ) তারা কোন মতেই কারো সাথে যুদ্ধ করতে চায় না। রাসূল যুদ্ধ করতে গিয়ে নিজের
দাঁতকে শহীদ করেছেন।
(ঞ) তারা শুধু দাওয়াত কিভাবে দিবে তা শেখায় যদিও তা ইসলামী পদ্ধতিতে নয়; অন্য কোন কিছু তারা শিখায় না। রাসূল জীবনের প্রতি মুহূর্তে কি করতে হবে, কার সাথে কিভাবে চলতে হবে সবকিছু শিখিয়েছেন।
(ঞ) তারা শুধু দাওয়াত কিভাবে দিবে তা শেখায় যদিও তা ইসলামী পদ্ধতিতে নয়; অন্য কোন কিছু তারা শিখায় না। রাসূল জীবনের প্রতি মুহূর্তে কি করতে হবে, কার সাথে কিভাবে চলতে হবে সবকিছু শিখিয়েছেন।
(ট) ইলিয়াসী তাবলীগ বুযুর্গদের সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। রাসূলের তাবলীগ একমাত্র
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (সূরা আন‘আম ১৬; সূরা বাইয়েনা ৫)।
(ঠ) ইলিয়াসী তাবলীগের অলিরা গায়েব জানেন। অথচ রাসূল (সাঃ) গায়েব জানতেন না
(সূরা আন‘আম ৫০; সূরা আরাফ ১৮৮)।
(ড) ইলিয়াস সাহেবের আক্বীদায় রাসূল (সাঃ) জীবিত। কিন্তু নবী (সাঃ) ইন্তেকাল
করেছেন (সূরা যুমার ৩০)।
(ঢ) বুযুর্গরা জান্নাত-জাহান্নাম দুনিয়াতে দেখেন। জান্নাত এমন যে, না কোন চোখ দেখেছে, না কোন কান শুনেছে এবং না কোন হৃদয় কল্পনা করেছে।
(ণ) ইলিয়াসী তাবলীগে বুযুর্গদের মৃত্যুকে অস্বীকার করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) - এর
তাবলীগের প্রত্যেকের মৃত্যু সত্য (সূরা আল-ইমরান ১৮৫)।
(ত) পর্যবেক্ষক ফেরেশতারা আল্লাহ ও বান্দার গোপন যিকির সম্পর্কে জানতে পারে না।
ফেরেশতাগণ পর্যবেক্ষণ হিসাবে রয়েছেন এবং আমরা যা করি তারা সে সব জানেন (সূরা
ইনফিতার ১০ ও ১২)।
(থ) ইলিয়াসী তাবলীগের কেন্দ্রস্থল ভরতের নিযামুদ্দীন মসজিদের ভিতরে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ও তার পুত্রের কবর রয়েছে। নাবী (সাঃ) কবরের দিকে সালাত পড়তে ও কবরকে পাকা নিষেধ করেছেন।
(থ) ইলিয়াসী তাবলীগের কেন্দ্রস্থল ভরতের নিযামুদ্দীন মসজিদের ভিতরে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ও তার পুত্রের কবর রয়েছে। নাবী (সাঃ) কবরের দিকে সালাত পড়তে ও কবরকে পাকা নিষেধ করেছেন।
(দ) মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস সাহেবের ইন্তিকালের পর আল্লাহর সাথে মিশে গেছেন।
নাবী করীম (সাঃ) বলেন, আল্লাহর সমতুল্য কেউ নেই, তার সাথে কেউ মিশতে পারে না (সূরা ইখলাস ৪; সূরা শূরা ১১)।
(ধ)- এতে সন্দেহ নেই যে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সব চেয়ে বড় ও সত্য মুবাল্লিগ (তাবলীগকারী)। অতঃপর তাঁর সাহাবাগণ যাঁরা সারা বিশ্বে নবী (সাঃ) এর নিয়মে তাবলীগ করে গেছেন। কিন্তু বর্তমান যুগের তাবলীগী জামাআত সেই নবীর ও তাঁর সাহাবাদের তাবলীগ ছেড়ে কয়েক দশক পুর্বে ভারতের সাহারানপুরের ইলয়াস সাহেবের তৈরি করা বরং স্বপ্নে পাওয়া তাবলীগ নিয়েছেন। নবী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাগণের তাবলীগ কি যথেষ্ট নয়? সেটা কি উত্তম তাবলীগ নয়? না এই যুগে তা অচল?(ন)-নবী (সাঃ) এর তাবলীগের মূল কথা ছিল বরং ইসলামের মূল কথাই হচ্ছে, তাওহীদ। কিন্তু বর্তমান তাবলীগে তাওহীদের দাওয়াত নেই।
(প)- নবী (সাঃ) এর তাবলীগে যে বিষয় থেকে সবচেয়ে বেশী সতর্ক করা হয়েছে তা হল, শির্ক থেকে সতর্কতা। ইলইয়াসী তাবলীগে শির্কের কথা বলা হয় না; অথচ দেশের আনাচে কানাচে অহরহ শির্ক ও শির্কের আড্ডা বিদ্যমান।
(ফ) -নবী (সাঃ) এর দাওয়াতের সব চেয়ে বড় অংশ ছিল, মুশরিকদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া। কিন্তু বর্তমান তাবলীগী জামাতে তাদের দাওয়াত দেয়া হয় না। অথচ তাবলীগ জামাতের জনক ইলইয়াস ও যাকারিয়া সাহেবের দেশ একটি মুশরিক দেশ।
(ব) -মহান আল্লাহ, পবিত্র কুরআন যদি আমাদের হেদায়েতের জন্য অবতীর্ণ করে থাকেন, তাহলে তা বাদ দিয়ে ফাযায়েলে আমলের শিক্ষা দেয়া হয় কেন? অনুরূপ নবী (সাঃ) এর হাদীস কি উত্তম বাণী নয়, তাহলে এখনও কেন সাধারণ লোককে বলা হবে, এগুলো তোমরা বুঝবে না। মানুষ না বুঝলে এসব কার জন্য অবতরণ করা হয়েছে?
(ভ) -ইসলাম কি শুধু ফযীলতের নাম? সকল বিধানের সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু ফাযায়েল বর্ণনা কেমন ইসলাম! ধরুন নামায একটি ইসলামের বিধান। এ সম্পর্কে মোটামুটি যা আছে তা হল, নামায কি, নামাযের গুরুত্ব, নামায ছাড়ার বিধান, নামাযের রুকন, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব, নামাযের পদ্ধতি এবং নামাযের লাভ বা ফযীলত। এখানে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে শুধু ফযীলত কেন?
(ম) -যেই তাবলীগের এত প্রসংশা ও ফযীলত বর্ণনা করা হচ্ছে, কিন্তু কখনো চিন্তা করেছেন কি সেই তাবলীগী নেসাবে অযু করা ও নামায পড়ার নিয়ম-পদ্ধতিটাও লেখা নেই। অন্যান্য বিষয়গুলির বর্ণনা তো দূরের কথা।
(য) -ইসলামের রুকন ৫টি আর ঈমানের ৬য়টি, যা হাদীসে জিবরীলে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু এই রকম একটি মৌলিক বিষয়ের তাবলীগ বাদ দিয়ে ৬য় উসূল আবিষ্কার কোন্ দলীলের ভিত্তিতে করা হয়? ইকরামে মুসলিম বা মুসলিমের সম্মানের নামে নীতি তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু সত্য হচ্ছে তাবলীগে তাবলীগীদেরই সম্মান করা হয়, অন্যদের ছায়াটাও তো তারা দেখতেদ পছন্দ করেন না।
(র) -তাবলীগের জন্য কুরআন সুন্নাহ কি যথেষ্ট নয়, শত শত বানোয়াট কেচ্ছা কাহিনীর আশ্রয় নেয়া হয় কেন? তবুও আবার সেই সব কেচ্ছা যাতে আছে সুফীদের কাশফ, কারামত, স্বপ্ন, ইল্কা, ইলহাম ও ফয়েযের কথা।
(ল) -শরীয়ার কোন মাসলায় আমীর সাহেব সরাসরি কুরআন সুন্না থেকে সমাধান না দিয়ে দেওবন্দে পাঠান কেন? এমন তো নয় যে, আপনারা তাবলীগের নামে দেওবন্দের প্রচার-প্রসার করছেন!
(শ) - আপনারা ফাযায়েলে আমল বইটি একাধিক ভাষায় অনুবাদ করেছেন কিন্তু এখনও আরবী ভাষায় তা অনুবাদ করা হচ্ছে না কেন? আপনাদের মধ্যে আরবী শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব নেই, না গুমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে এই রকম করেন না।
(ষ) -মোট কথা নবী (সাঃ) এবং সাহাবাগণের দাওয়াত-তাবলীগই হচ্ছে সহীহ, শুদ্ধ, পূর্ণ ও যথেষ্ট তাবলীগ। আর অন্যান্য তাবলীগের অনেকটাই হছে, ভুল, অশুদ্ধ ও অপূর্ণাঙ্গ এবং নতূন তাবলীগ। তাই আমাদের নিকট সেই মুহাম্মদী তাবলীগই যথেষ্ট।
[ফালিল্লাহিল হামদ]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন